
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পর্যাপ্ত ভিডিও ফুটেজ, ছবি এবং প্রত্যক্ষদর্শী থাকার পরও হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে উল্টো আহত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই মামলা নিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনার পর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে প্রধান অভিযুক্ত আবু নাসের মোঃ আবু সাঈদসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় হামলায় নেতৃত্বদানকারী ও প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত শুধু ভাড়াটে হামলাকারী সাব্বির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অপরদিকে, আবু সাঈদ প্রত্যাখ্যাত পতিত আওয়ামী লীগের অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত—তিনি নিজেই আহত সাংবাদিকদের নামে পাল্টা মামলা দায়ের করেন, মামলার ধারা: ১৪৩/৩২৫/৩০৭/৪২৭/৫০৬ দণ্ডবিধি। তার মামলায় জেলার কর্মরত ৩৭ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়।
সাংবাদিকরা বলছেন, এমন একটি মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন আছে, যেখানে ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কারা হামলাকারী। এতে প্রশাসনের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট।
হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আবু সাঈদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পতিত আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ-র আর্থিক সহায়তাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৯ সালের ৩১ মে প্রেসক্লাবে প্রথমবারের মতো হামলার নেতৃত্বও তিনিই দেন, এমপি রবির আশীর্বাদে। সেই সময় প্রেসক্লাবের নবনির্মিত হলরুমের নাম পরিবর্তন করে তিনি ফলক স্থাপন করেন “বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন” নামে।
পরবর্তীতে ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর, সাঈদ নিজের অবস্থান বদলে ক্ষমতাসীন দলের ভিন্নমতের একটি প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে থেকে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তার এই রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণেই পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় রয়েছে বলে সাংবাদিকদের অভিযোগ
সাংবাদিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সাঈদের পরিবার সাতক্ষীরার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি চাচা আব্দুর রউফের নেতৃত্বে, ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আরেক চাচা হাবিবুল ইসলাম হবির নিয়ন্ত্রণে এবং সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সরাসরি আবু সাঈদের দখলে। যদিও সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন হয়েছে, অন্য দুই প্রতিষ্ঠান এখনও সাঈদ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এই হামলা ও মামলা প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি শামিনুল হক বলেন, ডিসি অফিস থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে যে দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই মামলা হবে। আপনাদের সভাপতি ও সেক্রেটারি এ বিষয়ে অবগত আছেন। ঘটনাটি যেহেতু দুই পক্ষের সামনে ঘটেছে, তাই উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, প্রথমে নাশকতার মামলা করার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু আমি তা নেইনি। আমি মামলাটি সাধারণ (নরমাল) মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছি। সিদ্ধান্ত যেহেতু ডিসি অফিস থেকে এসেছে, সেখানে আমার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই।
সাংবাদিক সমাজের প্রশ্ন—যেখানে ভিডিও-প্রমাণ, আহত সাংবাদিকের মেডিকেল রিপোর্ট এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য মিলে পরিষ্কারভাবে দোষী চিহ্নিত, সেখানে গ্রেপ্তার না হয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই মামলা কেন?
এই ঘটনার জেরে সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজ গভীর হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা হামলাকারী ও মামলাবাজদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।