
আব্দুর রহমান,সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ২১০ নম্বর তালা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৬ সালে। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্মিত হয়নি কোনো স্থায়ী ও টেকসই ভবন। ফলে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে যেতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোর ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বহু পুরনো টিন। দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দাগ, ফাটল ধরা মেঝে এবং কোথাও কোথাও জমে থাকা পানি; বর্ষা মৌসুমে ফাঁক দিয়ে পানি পড়ে ক্লাস চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর গ্রীষ্মের খরতাপে শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ প্রতিনিয়তই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৪২ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে পাঠদানের দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচজন নারী শিক্ষক। মানবেতর পরিবেশেও তারা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জোহরা পারভীন বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আমরা একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন করেছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভবন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সরকারের পরিবর্তনের পর সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে।”
বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান তামিহ জানায়, “বৃষ্টির সময় বই ভিজে যায়, গরমে মাথা ঘুরে। ঠিকমতো বসতেও কষ্ট হয় ক্লাসে।”
অভিভাবক শরিফুল ইসলাম বলেন, “২৮ বছরেও একটা স্থায়ী ভবন হলো না—এটা খুবই লজ্জাজনক। আমরা উদ্বিগ্ন। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তালা উপজেলা সদরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এই বিদ্যালয়টির প্রতি বারবার অবহেলা করা হচ্ছে, যেখানে আশপাশের অনেক স্কুলে ইতিমধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, “এই বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি তালা শহরের শিক্ষার ভিত্তি। ২৮ বছরেও ভবন না থাকা চরম প্রশাসনিক উদাসীনতার প্রমাণ। আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাই, দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে।”
এ বিষয়ে তালা উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রথীন্দ্র নাথ হালদার বলেন, “বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। বাস্তবায়নের প্রস্তুতিও সম্পন্ন ছিল। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ স্থগিত রয়েছে। আমরা পুনরায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।”