
মো: রমিজ আলী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। সিটি গেট থেকে বড়দারহাট পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
এতে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহত হচ্ছে। প্রাণ হারানোর পাশাপাশি অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার সময় মোঃ রবিউল হোসেন ইমন (৩০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অতিক্রমকালে ঢাকামুখী লেনে একটি দ্রুতগামী মাইক্রোবাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
তিনি উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের লালানগর গ্রামের বজন সাহা বাড়ীর স্বপন সাহার ছেলে। কিন্তু সেই সস্প্রতি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মুসলিম পরিবারের মেয়ে বিবাহ করে সীতাকুণ্ড পৌর সদর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলে থাকা তার অপর বন্ধু হৃদয়।
৩১ জুলাই রাত পৌনে ৮টা। আরিফ ও জুয়েল দুই বন্ধু বাড়ি থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেল যোগে মোবাইল কিনতে চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেটের উদ্দেশ্যে রওয়না হোন। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটিয়ারী পার হলে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়ার পর ইউটার্ন ঘুরে মহাসড়কের উল্টো পথে যেতে চাইলে ইউটার্নের ঘোড়াই এস.এ গ্রুপের তেলবাহী মুসকান তেলের ভাউচার তাদেরকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দুজনেরই মৃত্যু হয়। তারা হলেন ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মাদামবিবিরহাট জাহানাবাদ ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল আহাদ আরিফ (২২) ও একই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জুয়েল (২৩)।
শুধু এ ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে উল্টোপথে অবাধ যান চলাচলের কারণে বহুবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও উল্টোপথে আসা যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেই বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গত ৭ মাসেই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১২৫ জন। হাইওয়ে পুলিশ বলছে এই সড়কে পথচারীদের উদাসীনতায় প্রচুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও গাড়িচালকরা দাবি করেন যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং উল্টোপথে বিনা বাধায় প্রচুর যানবাহন চলাচল করার কারণেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
সীতাকুন্ডে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কয়েকজনের সাথে দুর্ঘটনায় নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, সিটি গেট থেকে বড়দাগাহাট পর্যন্ত মহাসড়কে সর্বত্রই উল্টোপথে যান চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। সীতাকুণ্ড উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে পশ্চিমে প্রায় ১০ কিলোমিটার গ্রাম্য সড়ক রয়েছে। মহসড়ক থেকে সিএনজি অটোরিকশা এসে পূর্বদিকে অন্য গ্রামে যাবার সময় উল্টোপথে যায়।
একইভাবে মিরেরহাট বা নুনাছাড়া থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশাগুলো উল্টোপথে কয়েক কিলোমিটার এসে সীতাকুণ্ডের শেখপাড়া হয়ে উল্টোপথে পৌরসদরে প্রবেশ করে। এভাবে বাড়বকুন্ড, বাঁশবাড়িয়া, ছোট কুমিরা, বার আউলিয়া, কদমরসুল, ভাটিয়ারী, ফৌজদারহাট, সলিমপুরসহ সর্বত্রই উল্টোপথে যান চলাচল করছে একেবারে প্রকাশ্যে।
তারা আরো বলেন, মহাসড়কে রয়েছে প্রচুর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব রিকশা স্রোতের মতো চলছে উল্টোপথে। পথচারীরা আলাদা সড়কের কারণে শুধু একমুখী যানবাহন দেখেই পার হতে চান। কিন্তু অনেক সময় পেছন থেকে গাড়ি এসে তাদের চাপা দিচ্ছে।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল মমিন বলেন, পথচারী ও সাধারণ মানুষের উদাসীনতাই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটার মূল কারণ। সেই সঙ্গে চালকের ওভারস্পিড, ওভারটেক ও ওভারলোডের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে অধিকাংশ চালকের দুর্বলতা। পথচারী এবং চালকরা যদি আইন মেনে চলে তাহলে সড়কে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, জুনে ৭ জন নিহত, আহত ২৫ জন এবং সর্বশেষ জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছে। এতো সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দেহ ও নিহতদের লাশ উদ্ধারে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের।