মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

আসামিদের কান্না: ‘আমরা এ হত্যা করিনি’

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ডাঃ নিতাই হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আসামিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ সময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে চিৎকার চেঁচামেচিও করেন।

তের বছর আগের এই চিকিৎসক হত্যার ঘটনার পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত; এছাড়া চারজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার দশম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রেজাউল করিম রোববার এ রায় দেন।

এ মামলার দশ আসামির মধ্যে নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ, মাসুম মিন্টু, সাইদ ব্যাপারী, বকুল মিয়া এবং সাইদ মিজিকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন–আবুল কালাম, সাইদুল, ফয়সাল এবং পেদা মাসুম। আর রফিকুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এছাড়া রাতে ঘরে অনুপ্রবেশের দায়ে প্রত্যেককে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে চুরির দায়ে প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় ১০ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিচারক রায় পড়া শুরু করেন।

রায় শেষে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন আসামি বিচারকের সাথে কথা বলতে চান।

তখন বিচারক বলেন, “এ সময় কোনো কথা থাকতে পারে না।”

তখন এক আসামি বলেন, “কেন কথা থাকবে না।”

তারা বলতে থাকেন, তারা এ অপরাধ করেননি, কিছু জানেন না। বার বার তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

তখন বিচারক বলেন, “যে রায় দিয়েছি পরীক্ষা হবে।”

তখন একজন বলেন, “আমরা অপরাধ করিনি। কেউ দেখে নাই, আল্লাহ দেখছে। কি সাজা দিলেন।”

রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়।

কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া মাসুম মিন্টু বলেন, “বিনা কারণে আমাদের ফাঁসির রায় দিছে। আমরা এ মামলা সম্পর্কে কিছু জানি না। শেখ হাসিনা সরকার আমাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলায়ও জড়িয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি নিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমার বাসা লালবাগের কামরাঙ্গীর চরে। আর খুনের ঘটনা মহাখালীতে। ওই এলাকায় আমি জীবনে যাইনি। আমরা নির্দোষ, গরব ফ্যামিলির মানুষ। মামলা সম্পর্কে কিচ্ছু জানি না।”

এসময় আসামিদের স্বজনেরা কান্নাকাটি, চিৎকার, চেঁচামেচি করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন।”

ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই ছিলেন সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের একজন নেতা। ২০১২ সালের ২৩ অগাস্ট রাতে মহাখালীতে হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় খুন হন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের রাতে দোতলা ওই বাড়িতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. নিতাইয়ের সঙ্গে ছিলেন শুধু তার বৃদ্ধা মা। স্ত্রী লাকী চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামে।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিতাইয়ের বাবা বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন। ছয় মাসের তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে বলা হয়, চুরির সময় দেখে ফেলায় ওই চিকিৎসককে হত্যা করা হয়। আসামিরা তার বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা আর দুটি স্বর্ণের বালা নিয়ে যায়।

পুলিশের তরফে বলা হয়, নিতাই হত্যার আসামিরা ‘পেশাদার চোর’। গ্রেপ্তার আরেকজন অরুণ ছিলেন নিহত চিকিৎসক নিতাইয়ের গাড়িচালক।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে পাঁচজনকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডেরও কোনও সুরাহা এখনও করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

২০১৩ সালের ২২ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ কান্তির সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু করে ঢাকার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালত।

বিচার চলাকালে আদালত ২৯ জনের সাক্ষ্য শোনে। পাঁচজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত দশ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ