
মোঃ মাইন উদ্দীন: সন্দ্বীপের মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু রূপালী লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী লিঃ-এর প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক সংসদ সদস্য দ্বীপবন্ধু আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমানের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
২০০১ সালের ২০ অক্টোবর তিনি সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে তিনি রূপালী লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সু্যরেন্স, কর্ণফুলী ইন্সুইরেন্স , রূপালী ইন্সুইরেন্স এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকসহ বহু আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যক্তি জীবনের তিনি সন্দ্বীপে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন একজন নিখাদ নিরেট সংবাদসেবী। তার সম্পাদনায় দৈনিক রূপালীসহ সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক প্রায় ১১টি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। বর্তমান সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনেক সিনিয়র সাংবাদিক, কর্মকর্তা, টেকনেশিয়ান মুস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে দৈনিক রূপালীর সৃষ্টি। সংবাদ প্রকাশ ও পরিবেশনায় তিনি ছিলেন অদম্য সাহসী।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ছিলেন দক্ষ, একনিষ্ঠ ও বলিষ্ঠ।ক্রীড়া, পেশাজীবী সংগঠন, লায়ন্স ক্লাব, সন্দ্বীপ সমিতি, সন্দ্বীপ ইয়াং অ্যাসোসিয়েশনসহ অসংখ্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন মেয়াদে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দান করেন। মাদক ও ধূমপান রোধকল্পে গড়ে তোলেন ‘আমার দেশ’ নামক সংগঠন। সমগ্র বাংলাদেশে সংগঠনটি বিস্তৃত করেছিলেন।
মানবদরদী, উদার মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন বেকার যুবকদের কর্মের ঠিকানা, কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার ত্রাতা, অনাহারী-অর্ধাহারীর খাবার জোগানদাতা, গরিব-দুঃখী-অসহায় মানুষের আপনজন।শিক্ষাদীক্ষা, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে অনগ্রসর জনপদ সন্দ্বীপে স্ব-উদ্যোগে নিজ নামে ১১টির অধিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, মন্দিরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন তিনি । পাশাপাশি স্কুলভবন, ছাত্রাবাস, বিজ্ঞানাগার, শহীদ মিনার, ক্রীড়াঙ্গন গড়ে শিক্ষা খাতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
সংসদ সদস্য থাকাকালীনসন্দ্বীপে আন্তঃযোগাযোগ সড়ক ব্যবস্থা ছিল কাঁচা ও অনুন্নত। সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘব করতে ১৯৯১-২০০১ সালের মধ্যে ৫০টির অধিক রাস্তা পাকাকরণ ও উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করেন। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সমগ্র সন্দ্বীপ তছনছ হয়ে যায়। দুর্গত সন্দ্বীপবাসীর পাশে দাঁড়াতে ত্রাণের জাহাজ নিয়ে হাজির হন এমপি মুস্তাফিজুর রহমান তিনি ।
ঘরবাড়ি, স্বজনহারা সন্দ্বীপবাসীর আর্তনাদে অঝোরে কেঁদেছিলেন প্রিয় নেতা মুস্তাফিজ । সন্দ্বীপের মানুষের হৃদয়ে আজ ও তিনি স্মৃতিতে অমলিন, প্রকৃতিক ঘূর্ণিঝড়ে বানের তোড়ে ছিঁড়ে গেছে বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড, অসুখ-বিসুখ, শোক-দুঃখে মহামারী রূপ নিয়েছিল প্রিয় সন্দ্বীপ।
দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন সন্দ্বীপবাসীর দুঃখ, দৈন্যদশা। সুরক্ষিত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ, মার্জিনাল ডাইক, সিআরপি বাঁধ, স্লুইস গেট নির্মাণ ও মেরামত করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান কর্মগুণে জীবদ্দশায় শ্রেষ্ঠ ব্যাংকার, বীমাবিদ, সফল সংগঠক, আলোকিত মানুষ হিসেবে অসংখ্য সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হয়েছেন।
সাগরবেষ্টিত সন্দ্বীপের উন্নয়নে তার নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা, সর্বোপরি সন্দ্বীপবাসীর প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ দ্বীপের জনগণ তাকে দ্বীপবন্ধু খেতাবে অভিষিক্ত করেছিলেন। এই জনদরদি মানুষটি সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ২০০১ সালের ২০ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। জনতার হৃদয়ে চিরজাগরূক দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান।