সোমবার, ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

আগুনে কীট পতঙ্গের আবাস্থল ধ্বংস; হুমকিতে জৈববৈচিত্র

কামরুল হাসান, ফটিকছড়ি:  চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা রাবার বাগানে ‘আগাছা পরিষ্কারের’ নামে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। চলতি শীত মৌসুম জুড়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ চললেও দেখার যেন কেউ নেই। সাড়ে চার হাজার একরের এই বিশাল বাগানটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফআইডিসি)।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১০ সালের দিকে উপজেলার এসব বাগানে আগুন লাগানোর বিষয়টিকে জীববৈচিত্র্যের জন্য সংকটাপন্ন বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। জীববৈচিত্র্য নিধন বন্ধে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একটি চক্র নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
রবিবার  (২৬ জানুয়ারি) সরেজমিনে ইসলামপুর নামক স্থানে  দেখা গেছে, বাগানের কয়েকজন শ্রমিক আগুনের লাঠির শিখা হাতে নিয়ে বাগানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। আবার সচেতন কেউ কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সব মিলিয়ে সেখানে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “অবাধে রাবার বাগানে আগুন দেওয়ায় অসংখ্য ছোট ছোট কীট-পতঙ্গ এবং জীবজন্তু মারা যাচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।”
শ্রমিকদের নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মদ সেলিম নামের এক কর্মচারী। তিনি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আগুন দিচ্ছেন। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, “এসব আগাছা প্রতিবছর পরিষ্কার করতে হয়। নইলে মাটিতে পড়া ঝরাপাতায় এলাকার লোকজন আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাগানের ক্ষতি করে।”
স্থানীয় বাসিন্দা দাঁতমারা গ্রামের মুহাম্মদ ওমর ফারুক  বলেন, “শীতের শুরু থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বাগানের অভ্যন্তরে প্রতিদিন বিকেলে আগুন লাগানো হয়। এতে বড় গাছগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে। আমরা বাগান কর্তৃপক্ষকে পরিবেশের হুমকির বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তারা এসব কথায় কান দেন না।”
শ্রমিক ইউনিয়ন নেত মোঃ হানজালা বলেন,এইভাবে আগুন লাগা সম্পূর্ণ অন্যায়,নিয়ম হচ্ছে পাতা গুলো একজায়গায় জড়ো করে আগুন দেওয়া।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, “এভাবে আগাছা পুড়িয়ে নিধনের কারণে মাটি, ফসল ও এলাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবেশের ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ করা ঠিক নয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। পরিবেশ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।”
দাঁতমারা রাবার বাগানের সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. রুহুল আমিন বলেন, “বড় গাছ রক্ষা করতে ছোট ঝোপ-জঙ্গলগুলো পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে কিছুটা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হলেও কিছু করার নেই। আমাদের বাগান রক্ষা করতে হবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান বলেন, “বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে এসব বাগান এ ধরনের কাজ করতে পারে না। সেখানে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *