শনিবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আন্দোলনে ছেলে হারিয়ে অসহায় সোহেলের পরিবার, খোঁজ নেয়নি কেউ

মো. মেহেদী হাসান, নন্দীগ্রাম(বগুড়া) : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

ওই দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে গণভবনে যাওয়ার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সোহেল রানা (৩০)। সেই রাতেই তার লাশ নেওয়া হয় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভুস্কুর গ্রামে। পরদিন সেখানে তাকে দাফন করা হয়।

ঢাকায় একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সোহেল। তার আয়ে চলত স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন দিশেহারা পরিবারটি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি তাদের।

গতকাল রোববার সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা মাবিয়া বেগম ছেলের শোকে পাগলপ্রায়। লোকজন দেখলেই আহাজারি করছেন।

তিনি বলেন, ‘বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো জমি নাই আমাদের। স্বামী অসুস্থ, বড় ছেলেও বেকার। এতগুলো মানুষের খরচ বহন করত সোহেল। সেই ছেলেটাকে গুলি করে মেরে ফেলল পুলিশ। এখন আমাদের সংসার চলবে কী করে? খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। ছেলের বউ ৭ মাসের গর্ভবতী। ছেলের মৃত্যুর পর সে-ও গেছে বাবার বাড়িতে।’

সোহেল রানার মোবাইল ফোনে বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, ৫ আগস্ট দুপুরে সোহেল লাঠি হাতে বুকে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে বিজয় মিছিলে লোকজনকে সংগঠিত করছেন। তিনি সবাইকে গণভবনের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

সোহেল রানার বড় ভাই সিহাব উদ্দিন জানান, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সংসারের হাল ধরতে ৮-৯ বছর আগে ঢাকায় যান সোহেল। দেড় বছর আগে বিয়ে করে স্ত্রীসহ বসবাস করতেন ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায়। ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধার ঢোলভাঙ্গা গ্রামে।

সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। বাজার খরচের টাকা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে এক হাজার টাকা পাঠায়। তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে বলে, এলাকার কেউ ঘরে নেই, সবাই মাঠে নেমেছে। আমি একা ঘরে থেকে কী করব?’

সিহাব উদ্দিন আরও বলেন, ‘পরদিন সোহেল নিজেই কয়েকবার ফোন করে বাবা-মাসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে। ৫ আগস্ট বিকেলে ফোন করতেই রিসিভ করেন অপরিচিত একজন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বলেন, সোহেল রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ খবর শুনে আজাহারি শুরু হয় পরিবারে। ঢাকায় থাকা চাচাতো ভাইকে খবর দিলে তিনি সোহেল রানার লাশ নিয়ে আসেন বাড়িতে। পরদিন দাফন করা হয়।’

সিহাব জানান, হাসপাতালের দেওয়া মৃত্যুসনদ অনুযায়ী, ৫ আগস্ট বেলা পৌনে ৩টায় সোহেল রানার মৃত্যু হয়। একটি ছবিতে দেখা গেছে, তার বুকে জাতীয় পতাকা ছাড়াও ছোট একটি ব্যাগ ছিল। গুলি ব্যাগ ভেদ করে তার বুকে লেগেছে। ছোট ভাইয়ের জানাজায় বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা এসেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে কেউ আর খোঁজখবর নেয়নি তাদের।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *