নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদী শিবপুর ইটাখোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া সুজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলো। তার পরিবারের সদস্যরা শরীরে বেঁচে থাকলেও যেন আর মরমে বেঁচে নেই।
হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে সন্তানকে। আন্দোলনে নিহত ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে যেন পরিবারও হারিয়েছে পথ দেখার আলো। নতুন যে পথের যাত্রা শুরু হয়েছে তা যেন এক অনন্ত যাত্রা।
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের ছোড়া উপর্যুপরি ছররা গুলিতে নিহত হন দিনমজুর গাড়ি চালকসুজন। আবু সাঈদের গল্প আমাদের সবার চোখের সামনে দৃশ্যমান থাকলেও এমন শত শত মৃত্যুর গল্প থেকে গেছে অন্তরালে, অগোচরে। তাদের পরিবার আর স্বজনদের না বলা কথা, আর্তনাদ আর আর্তচিৎকার যেন থেকে গেছে পর্দার আড়ালে। নিহত পরিবারের স্বজনরা জানিয়েছেন তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা আর বর্বরতার শিকার হওয়া সন্তানদের এক করুণ চিত্র।
এদিকে সুজনের মা সংবাদকর্মীদেরকে জানান, আমার ছেলে প্রতিদিনের মতো ইটাখোলা ফাঁড়ির সামনে দিয়ে বাজার করতে গিয়েছিলো। হঠাৎই আবুল খায়ের নামে এক অফিসারের নেতৃত্বে ফাঁড়ির ছাদ থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ছেলেকে দেখে বুকের মধ্যে গুলি করে পুলিশ। আরেক পুলিশ সদস্য উপ-পুলিশ সদস্য বিল্লাল ও আনোয়ার আমার মৃত সন্তানকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। আমার ছেলের লাশ প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা ইটাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পড়ে থাকে। একপর্যায়ে আমি পাড়া-প্রতিবেশির মাধ্যমে সংবাদ শুনতে পাই যে আমার ছেলে সুজনকে খায়েরের নেতৃত্বে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি। যেহেতু আমরা গরিব মানুষ। তাই একটি সংগঠন মামলা করতে সহযোগিতা করতেছে। তাই আমরা মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে ইটাখোলা ফাড়ির সামনে ব্যবসায়ী মো. শাহীন মিয়া জানান, এই ৩ পুলিশ কর্মকর্তা খায়ের, বিল্লাল ও আনোয়ার সহ তারা বিগত সময়ে চাঁদাবাজী সহ বিভিন্ন অটোচালকদের মারধোর করেও টাকা নিতে শুনতে পেরেছি। সুজন নামে ছেলেটি সহজ সরল হওয়ায় খায়েরের নেতৃত্বে একটি টিম ছাদ থেকে গুলি করে মেরে ফেলে। একপর্যায়ে আমরা ভয়ে সিনেমা হলের পিছনে গিয়ে পালিয়ে থাকি। ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের অনেক সদস্য সুজনকে লাথি দিতে দিতে রাস্তায় ফেলে দেয়। তাই আমরা খায়েরসহ ঐ ৩ পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
এ বিষয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, ওসি স্যার ও খায়েরের নির্দেশে আমরা ছাদ থেকে গুলি করতে থাকি আমার জানামতে ৪ জনেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যেহেতু আমাদের থানাতেও সাধারন মানুষ আক্রমণ করেছে তাই আমরা গুলি করতে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে রিকশাচালক মো. আসাদ মিয়া জানান, ঘটনার দিন ইটাখোলা হাইওয়ে গেটের মূল দায়িত্বে ছিলো আবুল খায়ের নামে এই পুলিশ কর্মকর্তা। তার নেতৃত্বেই এই গুলি করার আদেশ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা এই খায়েরসহ অন্যান্য জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে খায়ের বিল্লাল আনোয়ারের নিকট গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগ করতে চাইলে তারা মোবাইল ফোনে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে নিজেকে পরিচয় দেওয়া মানবাধিকার কর্মী বিউটি আক্তার সংবাদকর্মীদেরকে জানান, হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা ফাঁড়ির ছাদ থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করে মানুষদেরকে হত্যা করেছে। এদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি।
এদিকে ইটাখোলা হাইওয়ের এক চা ব্যবসায়ী বলেন, আমি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয় এলোপাথাড়ি গুলি। সুজন এদিক দিয়ে যাওয়ার পথে সুজনের বুকে সরাসরি গুলি করে দেয় ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা। সুজন একজন সহজ সরল কর্মী ছিলো। ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে ইটাখোলা হাইওয়ে থানার ওসি ইলিয়াসের নিকট মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় একজন প্রতাপশালী সংবাদকর্মীর নিকট জানতে চাইলে, ঘটনার বিষয়টি মারামারি হয়েছে, ভাংচুর হয়েছে শুনেছি। কিন্তুু গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে কি না তা আমি জানিনা। ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হবে।
এদিকে সুজনের পরিবারকে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা আর্থিক অনুদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে সুজনের পরিবার। এতে করে তারা ছেলে হারানোর শোক কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবে।
০১৭১৬৪৭০০০৩