
রাশেদুল ইসলাম, কচাকাটা (কুড়িগ্রাম): আমার মৃত্যুর জন্য জাহেদা দায়ী। আমার জীবনটা নষ্ট করেছে কাওছার। মৃত্যুর জন্য এই দুইজনের নাম চিরকুটে লিখে সুবর্না আক্তার সুমনা (১৭) নামে এক কিশোরী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।
শনিবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সুমনা। পরে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। এর আগে ৮ জানুয়ারি রাতে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কেদার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সুবর্না আক্তার সুমনা ওই গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে।
মৃত্যুর আগে লেখা চিরকুটে আরও লেখা রয়েছে, ‘আমার জীনের মূল্য নেই, এসবের পিছনে সব দায়ী জাহেদা। আমি এই দুনিয়া থেকে চলে যাইতেছি। আমি তখনি শান্তি পাব যখন জাহেদা আর কাওছার সারা জীবন জেলে ধুকে ধুকে মরবে।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সাদুমোড় এলাকার শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুমনার সঙ্গে বাড়ির পাশের আজাদ আলীর ছেলে কাওছারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘ দিন মন দেয়া-নেওয়ার একপর্যায় তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। এতে কিশোরী গর্ভধারণ করেন। বিষয়টি লোকসমাজে জানাজানি হলে মেয়ের পরিবার বিয়ের জন্য কাওছারকে চাপ দেয়। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা গ্রাম্য সালিশ বসে। এতে কোনো প্রকার সুরাহা হয় না। অপর দিকে কাওছার গোপনে অন্য জায়গায় বিয়ে করেন। পরে উপায়ান্তর না পেয়ে মেয়ের পরিবার কাওসারসহ ৪ জনের নামে কুড়িগ্রাম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত কচাকাটা থানাকে মামলাটি ১০ জানুয়ারির মধ্যে রেকর্ড করার আদেশ দেয়।
এদিকে মেয়ের গর্ভের সন্তানের বয়স পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও গর্ভের সন্তানের পরিচয় ও প্রেমের স্বীকৃতি না পেয়ে ৮ জানুয়ারি রাতে বিষপান করেন সুমনা। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে মারা যায় সুমনা। পরে ময়নাতদন্ত শেষে আজ রোববার সন্ধ্যায় মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ।
কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন জানান, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর মামলাটি ৭ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।