সোমবার, ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম উত্তর : দেশের বিভিন্ন জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে খুব একটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও এখনো আগের মতোই রয়েছে।

দেখা যায়, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ সময় ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার সহ ১৬টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্ট ২৯ সেন্টিমিটার ও ধরলা কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী ভূরুঙ্গামারী,ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী , কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, রাজারহাট, চিলমারী, রৌমারী, চর রাজিবপুর এই ৯ উপজেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, ২৩হাজার ৪৫২ পরিবারের ১লাখ ১৭ হাজার ২৬০জন পানিবন্দী রয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, ৩৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে,৩টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।বন্যার্তদের জন্য ৪০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে এরমধ্যে ২৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২হাজার ১৯২জন বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ৩৮৭ মেট্রিকটন চাল, ২১ লাখ ৮৫হাজার টাকা ও ১৮হাজার৯৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত রয়েছে।বানভাসিদের সহায়তায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

এদিকে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে নয় উপজেলার ৪৯ ইউনিয়নের চার শতাধিক গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দী পরিবারগুলো আট দিন ধরে গবাদি পশু-পাখিসহ পাকা সড়ক ও উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। বন্যার পানিতে তাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে আছে। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও কলা গাছের ভেলাই বানভাসিদের একমাত্র ভরসা।

এছাড়াও বন্যাকবলিত হওয়ায় জেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের তিন শতাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যালাইন, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ বানভাসিদের ঘরের মজুদ খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। অনেক পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৩৮৭ টন চাল, নগদ ২২ লাখ টাকা ও ১৮ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি এই ত্রাণ সহায়তা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার, সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৩২ সেন্টিমিটার এবং শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটা চরের বাসিন্দারা জানান, ৬-৭ দিন ধরে বাড়িতে বন্যার পানি।গরু, ছাগল হাঁসমুরগি নিয়ে পাশে একটি উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে তারা।

অন্যদিকে অধিকাংশ পরিবারে ৮দিন থেকে জ্বলছে না চুলা। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির কারণে বানভাসিরা পরেছে মহাবিপাকে।তারা ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে। বেশিরভাগ বানভাসি নৌকায় রাত্রি যাপন করছে। প্রশাসন থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও এখনও সবার কাছে পৌঁছেনি ত্রাণ সহায়তা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *