আলমগীর হোসেন, কেশবপুর (যশোর) : কেশবপুর পৌরসভার ৩টি সড়ক সংস্কারে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
নিম্নমানের ইট-খোয়া-বালু ব্যবহারের অভিযোগে ২৬ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌর এলাকার মধ্যকুল সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এর ১২ দিন পর একই অভিযোগে পৌর মেয়র শহরের মধুসড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এছাড়া, পৌর এলাকার বালিয়াডাঙ্গা-ব্রহ্মকাটি সড়কেও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বিতর্কিত ওই সাব-ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ফলে এসব সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, বিশেষ আইওজিআইপি প্রকল্পের আওতায় ৪টি প্যাকেজে কেশবপুর পৌরসভার সড়ক, ড্রেনসহ অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় ৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের টেন্ডার অনুযায়ী সর্বনিন্ম দরদাতা হিসেবে ৪টি প্যাকেজের কাজগুলি পান যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বনান্তর ট্রেডিং করপোরেশনের সত্ত্বাধিকারী আবু সাঈদ। তিনি কাজটি বিক্রি করে দেন সাব-ঠিকাদার লুৎফর রহমানের কাছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মধ্যকুল নাথপাড়ার কবির হোসেনের বাড়ি হয়ে যশোর-সাতক্ষীরা মেইন সড়ক পর্যন্ত ৮৩০ মিটার আরসিসি সড়ক, কেশবপুর প্রেসক্লাব হতে শহরের ভেতর দিয়ে মাইকেল গেটের টিএন্ডটি মোড় পর্যন্ত ড্রেন ও সড়ক সংস্কার এবং বালিয়াডাঙ্গা থেকে ব্রহ্মকাটি এমপি আজিজের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে।
শিডিউল অনুযায়ী এসব সড়ক সংস্কারে ১নং ইটের খোয়া, বালু প্রয়োজনীয় সিমেন্ট ব্যবহারের নির্দেশা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সাব ঠিকাদার সড়ক নির্মাণের শুরুতেই নিন্মমানের ইটের খোয়া, মাটি মিশ্রিত ভিত বালু ও প্রয়োজনীয় সিমেন্ট ব্যবহার না করে যেনতেনভাবে সড়কের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২৬ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তুহিন হোসেন নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা পেয়ে মধ্যকুল নাথপাড়ার কবির হোসেনের বাড়ি হয়ে যশোর-সাতক্ষীরা মেইন সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে, একই ঠিকাদার কেশবপুর প্রেসক্লাব হতে শহরের ভেতর দিয়ে মাইকেল গেটের টিএন্ডটি মোড় পর্যন্ত সড়কের কাজ করছেন। এসড়কে বর্তমান বর্ডার ওয়াল গাথুনি ও ড্রেন খোড়ার কাজ চলছে। কোনো কোনো জায়গায় সড়ক গর্ত করে রাখা হয়েছে। এতে বর্ষার পানি জমে জনগন ও হাটুরেদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসড়কেও ১নং পিকেটের খোয়া ও ভিতবালু ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ওই ঠিকাদার খোয়া তৈরির জন্য কেশবপুর প্রেসক্লাবের সামনে নিন্মমানের ইট স্তুপ করে রাখে। ৮ জুলাই খবর পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে। পরে পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, যে কোনো সড়ক সংস্কার করতে হলে সর্বপ্রথম প্রকল্পের সামনে সাইন বোর্ড টানিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও পৌরসভার এসব রাস্তা সংস্কারে তা মানা হচ্ছে না। যে কারণে এসব প্রকল্পে কতটাকা বরাদ্দ, কিভাবে সড়কটি নির্মাণ করা হবে, তা জনগণ জানতে পারছে না। শুধু এদুই সড়কই নয়, বালিয়াডাঙ্গা থেকে ব্রহ্মকাটি এমপি আজিজের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজেও নিন্মমানের ইট, ভিতবালু ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভাল না করলে এসব সড়ক এক বছর যেতে না যেতেই ধসে ও দেবে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মধ্যকুল এলাকার শেখ আব্দুল গণি বলেন, নাথপাড়া সড়কটি নির্মানে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার আবু সাঈদ সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে যেনতেনভাবে সড়কটি নির্মাণ করছেন। যা কয়েক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে এসে কাজটি বন্ধ করে দিয়ে গেছেন। এ প্রকল্পে কতটাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং কিভাবে সড়কটি নির্মাণ করা হবে, তা তারা কাউকে বলছেন না।
সাব-ঠিকাদার লুৎফর রহমান বলেন, শিডিউল অনুযায়ী সকল কাজ হচ্ছে। ১নং ইটের পিকেট দেয়ার কথা থাকলেও ভাটা থেকে ভুলবশত ওই পিকেট পাঠানো হয়। তা ফেরৎ দেয়ার কাজ চলছে।
পৌরসভার কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান জানান, আমি নিজেই সড়ক সংস্কার কাজ দেখভাল করছি। ঠিকাদার যতই চালাকি করুক না কেন, কাজ দেখে নেয়া হবে।
ঠিকাদার আবু সাঈদ বলেন, সিডিউল অনুযায়ী সড়ক নির্মানে সিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে কেশবপুর পৌর সভার নির্বাহী প্রকৌশলী এম এম নুর আহম্মেদের নিকট জানতে চাইলে তিনি কোন তথ্য না দিয়ে পৌর মেয়র রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বলেন।
পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, নিম্নমানের ইট ব্যবহার করার কারণে মধুসড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া শিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদার অন্যসব সড়ক নির্মাণ কাজ করছেন। যা পৌরসভা থেকে তদরকি করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন বলেন, এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানসহ মহল্লাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মধ্যকুল নাথপাড়া সড়কে নির্মাণের কাজটি দেখতে যান। এ সময় দেখা যায়, সড়ক নির্মাণে একেবারে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ঢালাইয়ে প্রয়োজনীয় সিমেন্টও ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাই সড়কটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
তার চাকরির বয়সে এত বাজে কাজ তিনি এর পূর্বে কখনো দেখেননি বলে সাংবাদিকদের জানান।