মঙ্গলবার, ১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

গোপালগঞ্জে বেনজীরের ইকো রিসোর্ট ‘সাময়িক’ বন্ধ

যায়যায় কাল প্রতিবেদক : গোপালগঞ্জে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক’ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

সোমবার সকাল থেকে রিসোর্টে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দর্শনার্থীদের জন্য পার্কও বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের’ বুকিং ম্যানেজার মো. সাব্বির।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আপাতত রিসোর্ট ও পার্কের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রিসোর্ট ও পার্কের সার্ভারে সমস্যার কারণে অতিথি ওদর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। এ কারণে কয়েক দিনের জন্য রিসোর্ট ও পার্ক বন্ধ থাকবে।”

সার্ভারের সমস্যার সমাধান হলে আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে রিসোর্ট ও পার্ক খুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

২০১৫ থেকে ২০২০ সালে র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ সাল থেকে থেকে ২০২২ পর্যন্ত আইজিপি থাকাকালীন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের ছোটখোলা গ্রামের ৬২১ বিঘা জমির ওপর ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক’ গড়ে তোলেন বেনজীর আহমেদ। তার বিরুদ্ধে এ রিসোর্ট ও পার্কের প্রায় সব জমি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভয় দেখিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে কেনার অভিযোগের খবর এসেছে।

এ বিষয়ে গত শনিবার সংবাদমাধ্যমে এলাকাবাসী বক্তব্য দিলে পুলিশ ডেকে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পুলিশের লাঠিপেটায় ইকোপার্কের পাশে সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রামের কয়েকজন আহত হওয়ার খবরও আসে। এ ঘটনার পর পার্ক এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

গেল ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।

তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।

বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।

এরপর ২৩ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা।

একই দিন হাই কোর্ট এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে উঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ।

নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ৮টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।

এর আগে গত ২ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বেনজীর। পরে ২০ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় ২৫ মিনিটের একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন সাবেক আইজিপি। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করেন।

তিনি যেসব সম্পত্তি অর্জনের তথ্যকে ‘মিথ্যা’ বলছেন, কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন বেনজীর।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ