
মো. মারুফ হোসেন লিয়ন, সৈয়দপুর (নীলফামারী): নীলফামারীর সৈয়দপুরের গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। ষড়ঋতুর এ দেশে ভাদ্র-আশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই দেখা যেত গ্রামাঞ্চলের ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের সমাহার। এখন সেগুলো আর তেমন চোখে পড়ে না। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো একটির সঙ্গে আরেকটি। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো।
মহাকবি কালিদাস শরৎ বন্দনায় বলেছিলেন, ‘প্রিয়তম আমার, ওই চেয়ে দেখ, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’
সতিনি ‘ঋতু সংহার’ কাব্যে আরও লিখেছেন, ‘কাশফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নববধূর মতো শরৎকাল আসে।’ শরৎ এলেই আমরা হারিয়ে যেতে চাই কাশবনে।
কবি জীবনন্দ দাশ শরৎকে দেখেছেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। শরতের এ অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন নেই সিদ্ধান্ত নেন। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। শরৎ বলতেই আমরা যেন কাশফুল বুঝি। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।
মাঠজুড়ে কাশফুলের কোমর দোলানো নৃত্য। এইতো শরতের বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে নদীর দু’ধারে, জমির আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। এখন গ্রামবাংলায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের খেত। সাধারণ মানুষের বিনোদন-প্রকৃতিতে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, নদনদীর ধার, ঝোপঝাড়, জঙ্গল, পুকুর, খালবিল, আবাদি জমির আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা কাশফুলের দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজনও নেই। কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাটা, ডালি, ঝুড়ি তৈরি করতো। গ্রামাঞ্চলের বাংলার মানুষ ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করতো। সেগুলো আর চোখে পড়ে না।