বৃহস্পতিবার, ১৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

দুই দিনের সিভিল সার্জন সম্মেলন উদ্বোধন

চিকিৎসকরা চাইলে স্বাস্থ্যখাতে ২৫ শতাংশ উন্নতি করা সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তনের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিকিৎসকদের পরিবর্তনের মানসিকতা নিয়ে চিকিৎসা সেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি সোমবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সিভিল সার্জন সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের প্রতি এ আহ্বান জানান।

জেলা সিভিল সার্জনদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম বারের মত এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা সিভিল সার্জনদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের যতটুকু চিকিৎসা সরঞ্জাম বা সুযোগ সুবিধা রয়েছে, এই পরিস্থিতির মধ্যে যদি আমরা পরিবর্তনের জন্য নিজের মন ঠিক করতে পারি, তাহলে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার ২৫ শতাংশ উন্নতি হবে।’

সিভিল সার্জন সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই সম্মেলনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন মানসিকতার উন্মোচন করছি এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে নতুন পথচলা শুরু হলো।’

চিকিৎসকরা চাইলে স্বাস্থ্যখাতের ২৫ শতাংশ উন্নতি দ্রুত নিশ্চিত করা সম্ভব উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘শুধু মন ঠিক করা যে আমি আমার কাজটা করব তাতেই ফল পাওয়া যাবে। আর এই ২৫ শতাংশ উন্নতি অত্যন্ত মূল্যবান। এই পরিবর্তনের জন্য কেউ আপনাকে কিছু চাপিয়ে দেবে না। আপনার সৃজনশীলতা ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে করতে হবে।’

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সময়কে ‘গুহাবাসীর মানসিকতার সময়’-এর সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগের আমল হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। হঠাৎ আমরা গুহা থেকে বের হয়ে এসেছি। এখন আমরা আরেক পৃথিবীর সামনে। সেই গুহার মানসিকতা দিয়ে তো এই পৃথিবী চলবে না। গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে দুর্নীতি কমাতে হবে। পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’

সিভিল সার্জনরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের মূল চালিকা শক্তি উল্লেখ করে সরকার প্রধান আরো বলেন, ‘সম্মেলনে আজ আমরা যারা এখানে বসে আছি এরাই হলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত। আমরা চাইলে স্বাস্থ্য খাতের পরিস্থিতি পাল্টে ফেলতে পারি আবার খারাপ পর্যায়েও নিয়ে যেতে পারি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা যে স্বাস্থ্যহীন অবস্থায় রয়েছে, সেটা আমরা সবাই বুঝি। তবে একে অপরকে এর জন্য দোষ দিয়ে আর কাজ হবে না। দোষ দিলে তো স্বাস্থ্যহীনতা দূর হয়ে যাবে না। এর প্রতিকার করতে হবে যাতে আমরা স্বাস্থ্য সেবা ঠিক করতে পারি। দুনিয়ার যত দেশ আছে তাদের স্বাস্থ্য খাত যদি আমাদের চেয়ে ভালো করতে পারে, তাহলে আমাদের কী গাফিলতি আছে, কী অভাব আছে-সেটা নিজেদের কাছে আত্ম জিজ্ঞাসা করুণ। তাহলে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।

প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলনে উপস্থিত সিভিল সার্জনদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হলে অনেক জিনিস সমাধান হয়ে যায়। অনেক প্রশ্ন সমাধান হয়। আশা করি দেখা সাক্ষাতের কারণে অনেক সুফল পাবো।’

সম্মেলনে সারা দেশের সিভিল সার্জনরা অংশ নিয়েছেন। উদ্বোধনের পর দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের কার্য অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিভিল সার্জনদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মো. জিল্লুর রহমান। তিনি প্রতিটি হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আনসার বা ‘স্বাস্থ্য পুলিশ’ মোতায়েনের প্রস্তাব করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এবং মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *