বুধবার, ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

জলবায়ুর পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে রোগের ধরণ

সৈয়দ রিয়াদ মিয়া : জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শরীরের নানান পদ্ধতির পরিবর্তন হয়। এসব পরিবর্তন আমাদের অসংক্রামক রোগ (ক্রনিক ডিজিজ) বাড়িয়ে দেয়। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। আমাদের খাদ্য চক্রেও লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। লবণাক্ততা বাড়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ছে, সেসঙ্গে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। পাশাপাশি বায়ুদূষণের ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের বক্ষব্যাধি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। নিশ্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশ করছে। এসব ক্ষতিকর পদার্থ শরীর থেকে বের করতে কিডনি এবং লিভারের ওপর তৈরি হচ্ছে বাড়তি চাপ। এতে শরীরে টক্সিসিটি ইফেক্ট বেড়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী  যায় যায় কালকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাধারণত যেসব রোগ জীবাণু মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, সেগুলো ক্ষতিকর রূপে আবির্ভূত হয়। যে রোগগুলো অন্য কোনো পশু কিংবা প্রাণীর হওয়ার কথা, মানুষের হতো না, সেগুলো এখন পশু ও প্রাণী থেকে মানুষের হচ্ছে।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আগে যে রোগগুলো বনে-বাদাড়ে সীমাবদ্ধ থাকতো, বন-বাদাড় পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংসের ফলে সেগুলো এখন মানুষের শরীরে সংক্রামিত হচ্ছে। যেমন করোনার মতো জুনোটিক ডিজিজ। পাশাপাশি এর ফলে জলজীবন, ভূমি জীবন, প্রাণী অথবা মানুষের জীবনের পরিপার্শিকতা ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের সুস্বাস্থ্য পরিবেশের সঙ্গে জীবনের যে ভারসাম্য তার ওপর নির্ভর করে। যখন সেই প্রতিবেশ এবং পরিবেশ বিপদাপন্ন হয়, তখন জীবনের সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানব স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি। আবহাওয়া, তাপমাত্রার উঠানামা, মাটি এবং পানিতে দূষণের ফলে রোগ জীবাণুর ধরন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো রোগ জীবাণুর পুনরাবির্ভাব হচ্ছে। বেশ কিছু রোগ জীবাণুর মিউটেশন হয়ে নতুন ধরনের মারাত্মক কিছু রোগ তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে আমরা সেগুলোর ভয়াবহতা লক্ষ্য করেছি।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্যের কম্পোজিশনের পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। যেমন অতিরিক্ত লবণাক্ততা এবং সুপেয় পানির অভাব। এর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য রোগের সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্য উপাদানেও মারাত্মক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। খাদ্যের পরিমাণ বাড়লেও পুষ্টিমান কমে যাচ্ছে। ফলে পুষ্টিগত অসুখগুলো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. লিয়াকত আলী বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মানুষের ঘরে বসে থাকার প্রবণতা বেড়েছে এবং কায়িক শ্রমের প্রবণতা কমে গেছে। ফলে স্থূলতা বাড়ছে। স্থূলতার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। অসংক্রামক ব্যাধি যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোগ-জীবাণুর পরিবর্তন হচ্ছে। প্রকৃতি এবং পরিবেশ পরিবর্তনে আমাদের খাদ্য উপাদান এবং অভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। সবকিছুর যোগফল স্বাস্থ্যগত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. লিয়াকত আলী।

বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, পৃথিবীব্যাপী এখন যে উন্নয়নের নেশা চলছে, সেই উন্নয়নকে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করে এমন যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন করলে, তাতে হিতে বিপরীত হবে এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়বে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *