শনিবার, ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৮শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

‘জাওয়ান’ ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতা 

সৈয়দ রিয়াদ মিয়া : বলিউড থেকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘জাওয়ান’সিনেমা বেশ আলোচনা তৈরি করেছে। আলোচনার  কারণ এটা নয় যে ৫৭ বছর বয়সী শাহরুখ খান এই সিনেমার মূল তারকা, কিংবা মেগাস্টারদের হাট বসেছে সিনেমার গল্প, আসলে এমন কিছুই নয়। কারণ তিন যুগের ক্যারিয়ারে শাহরুখের অনেক সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাহলে কী রসদের টানে দর্শক হুমরি খেয়ে পড়েছে সিনেমা দেখতে? তবে যারা এরই মধ্যে সিনেমাটি দেখেছেন তাদের অনেকই বলেছেন, জাওয়ানের পরতে পরতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে সেই গল্প যা আপনার আমার সবার চেনা।

‘জাওয়ান’ দেখে মনে হয়েছে, এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র হলেও-এর প্রেক্ষাপট জুড়ে শুধুই শোষিত রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার আখ্যান। এই বাস্তবতার বাইরে আমরা কেউ নই। তবে বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোকে উপলক্ষ করেই যেন এর প্লট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা, নেপাল ভূটান, মিয়ামার, আফ্রিকার দেশসমূহ বা ভারতের আশে পাশের দেশগুলোর মানুষ তাদের নিজেদের দেশের সঙ্গে সহজে এই গল্পকে মেলাতে পারবেন। দক্ষিণি সিনেমার পরিচালক ও কাহিনীকার অ্যাটলি কুমার সেই কাজটি করেছেন খুব সহজভাবে।

জাওয়ান চলচ্চিত্রের মূল উপকরণ ও গল্প ভারতের রাজনীতি ও সমাজনীতি। সেখানকার মানুষের নিত্যদিনের যে শোষণ, শাসকদের চোখ রাঙানি, সাধারণ মানুষের চোখে দেখা সেই সমাজ ব্যবস্থাকে সেলুলয়েডে তুলে ধরেছেন পরিচালক। যে গল্পের শোষিত কৃষকের আত্মহুতি থেকে শুরু করে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবে শত শত শিুশুর মৃত্যুর করুণ বাস্তবতা ঠাই পেয়েছে। পরিচালক এও দেখাতে ভুল করেননি এসবের পেছনে কারা রয়েছেন। রাজনৈতিক নেতা ও মুনাফখোরদের যে স্বার্থ, সেটাই উঠে এসেছে জাওয়ানে। যে স্বার্থের কাছে বলি হতে হয় লক্ষীর বাপের মতো কৃষক, ড. ইরামের মতো মেধাবী চিকিৎক ও বিক্রম রাঠৌরে মতো নিষ্ঠাবান মিলিটারি অফিসারকে।

এই সিনেমার তিনটি হাইজ্যাকের গল্প ও হাইজ্যাকের পেছনের রহস্য নিয়েই জাওয়ানের মূল প্লট।  সেটাকে নানান আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে যারা এই হাইজ্যাকের সঙ্গে জড়িত তারা অসাধারণ কেউ নন, একেবারে সাধারণ পরিবারের সন্তান। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়েমের ভুক্তভোগী মানুষগুলোই এই গল্পের প্রধান চরিত্র হিসেবে এসেছে।

সিনেমার শুরুতেই একটি দৃশ্যে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক নদীর পানিতে একটি মৃতপ্রায় মানব শরীর ভেসে যাচ্ছে। সেটি আবার চোখে পরে এক ছোট শিশুর । পরে মায়ের সাহায্যে নদীতে পাওয়া সেই মৃতপ্রায় মানুষটিকে বাড়ি এনে লোকজ চিকিৎসা দিয়ে তাকে  বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে পরিবারটি। সেদিন অকষ্মাৎ ওই জনপদে আক্রমণ করে দস্যুরা। সাধারণ মানুষ যখন দস্যুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য চিৎকার করছিলো, ঠিক এ দৃশ্যে পর্দায় হাজির হন বিক্রম রাঠৌর, যদিও এই দৃশ্যে তার পরিচয় অজানা থাকে। অন্তর্জালে মুখে ব্যান্ডেজের যে ছবি ভাইরাল হয় সেই একই দৃশ্যে সামনে আসেন শাহরুখ খান।

যে দেব শিুশ ও তার মা নদীর কাছ থেকে মৃতপ্রায় মানুষটির প্রাণ বাঁচিয়েছিলো। সেই মানুষটি ঐশ্বরিকভাবে দস্যুদের হাত থেকে তাদের প্রাণ রক্ষা করতে চলে আসে । মুমূর্ষু মানুষটি মুহুর্তেই গোটা জনপদের কাছে দেবদ্যুত বনে যান। বিক্রম রাঠৌর নিজেও জানেন না তার পরিচয়।  তখন তিনি জনপদের মানুষকে প্রশ্ন করে ‘কে আমি? তখনই পাহাড়ী ছোট শিুশটি তাকে বলে উঠে, ‘আমি বড় হলে তোমার পরিচয় খুঁজে বের করবো।’এই সময়টাতে অসুস্থ বিক্রম পার করেন জীবনের বাকি সময়।

সিনেমরা দ্বিতীয় দৃশ্যটির সঙ্গে প্রথম দৃশ্যের সময়ের পার্থক্য ত্রিশ বছরের। ত্রিশ বছর পর কোনো একদিন মুম্বাইয়ের কোনো একটি ম্রেট্রোরেল হাইজ্যাকের শিকার হয়। তবে এটা কোনো সাধারণ হাইজ্যাকের ঘটনা নয়। সংঘবদ্ধ এই হাইজ্যাকের নেতৃত্ব দেয় আজাদ রাঠৌর নামে এক জেলার  ও লক্ষ্মী, ডা. ইরাম, ইশকরা, কল্কি, হেলেনা এবং জাহ্নভি নামে ছয় নারী। তবে তারা সব যাত্রীকে অক্ষত রাখার বিনিময়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা দাবি করেন। এর জন্য তারা যোগাযোগ করেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড(এনএসজি) অফিসার নর্মদা রাইয়ের (নয়নতারা) সঙ্গে। তবে সেই টাকা কে দেবে, কোথা থেকে টাকা আসবে, সেটা তারা বলছে না। যেহেতু কেউ একজন নিজেরে মেয়েকে বাঁচাতে টাকাটা দেবেন সেই পরিকল্পনা হাইজ্যাককারদের ছিলো।

এরই মধ্যে ঘটে আরেক নাটকীয়তা, এই সময়ে হাইজ্যাক দলের প্রধানের পরিচয় যেহেতু গোপন, তিনি  নিজেকে বিক্রম রাঠৌর পরিচয় দিয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার বায়না করেন। তিনি এও দাবি করেন তাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। কিন্তু এনএসজি অফিসার নর্মদা জানায়, এটা কোনো মামুলী বিষয় না। হাইজ্যাক টিমের লিডার তখন বলে, তাহলে এই মেট্রোর একজন মানুষকেও তারা জীবীত ছাড়বে না। ইতিমমধ্যে ভিডিও কলে তারা একজন নারীকে হত্যার দৃশ্য দেখিয়ে এনএসজিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।

কৃষিমন্ত্রী যখন ফোন কলে হাইজ্যাককার টিমের প্রধানের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন তাকে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, আপনারা এমন একটি সিস্টেম দাঁড় করিয়েছেন যেখানে বড় লোককে মার্সিডিজের স্বাদ পূরণ করতে সর্বনিম্ন মাত্র ৮ শতাংশ হারে সুদের বিনিময়ে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। আর একজন কৃষক যিনি এই দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন, তাকে ট্রাক্টর কেনার জন্য ব্যাংক ঋণ বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন। তাদেরকে দিতে হচ্ছে ১৩ শতাংশ হরে সুদে? সেটা পেতেওে আপনাদের দিতে হয় ঘুষ। হাইজ্যাককারে প্রশ্নে কাচমাচু হয়ে যান কৃষিমন্ত্রী।

কৃষিমন্ত্রীকে উদ্যেশ্য করে, হাইজ্যাককার দলের টিম লিডার বিক্রম রাঠৌর ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের এক কৃষকের গল্প বলতে শুরু করেন। যেখানে একজন কৃষক ঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের কাছে দশ দিনের সময় চান। সময় তো দেনই নি, উল্টো তারা ওই কৃষককে তার স্ত্রী ও কন্যার সামনে ধুতি খুলে ফেলেন। লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে তার। এর পর দিনই গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন সেই কৃষক।

ওই কৃষকের মৃতদেহ নিয়ে যখন তার স্ত্রী-কন্যা বাড়িতে কাঁদছিলেন, ঠিক সেই সময়ে আবারও ঋণের কিস্তি আদায় করতে আসেন ব্যাংকের লোকেরা। ঋণের টাকা চাইলে কৃষকের স্ত্রী বলে, আজকেও তোমরা টাকা নিতে আসছো? দেখছো না লোকটা নেই? এই কথা বলার পরই ব্যাংকের লোকেরা বলে উঠে, ‘তোর স্বামী নাই এখন মঙ্গলসূত্র দিয়ে কি করবি?’ এই বলে তার গলা থেকে মঙ্গলসূত্রটি খুলে নেয়।

একজন কৃষকের এমন করুণ গল্প বলার পর কৃষিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন কৃষক আত্মহত্যা করেছে আপনি জানেন? তিনি জানালেন সঠিক সংখ্যাটি তার জানা নেই। হাইজ্যাক টিমের টিম লিডার জানায়, ভারতে এখন পর্যন্ত  ১০ হাজার ২৮১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন শুধুমাত্র সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়া।

এই সময়ের ম্রেট্রোতে হাইজ্যাক হওয়া ট্রেনে নিজের মেয়ের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ট্রান্সফার করে দেন কালী গায়কোয়াড় (বিজয় সেথুপতি) নামে ভারতের এক শীর্ষ ব্যবসায়ী। টাকা ট্রান্সফার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটাকে আটকানোর চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়। কিন্ত জানা যায়, যে টাকা তারা ট্রান্সফার করেছে তা ক্ষতিগ্রস্থ ৭ লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাবে ট্রান্সফার করেছে হাইজ্যাক টিম। এই ঘটনার পর হাইজ্যাককার টিম আরও একটি মেসেজ থ্রো করে, যে, তারা আবারও আসবে অন্য কোনো সময় অন্য কোনো অনিয়ম নিয়ে। এভাবেইে এগিয়ে চলে সিনেমার গল্প।

ঘটনাচক্রে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড(এনএসজি) অফিসার নর্মদা রাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় জেলার  আজাদ রাঠৌরের। আজাদের পরিচয় নর্মদা জানে না। কিন্তু হাইজ্যাকের যে ঘটনা ঘটেছে সেই টিমকে ধরার দায়িত্ব নর্মদা রাই ও তার সতীর্থ ইরানির ওপর পরে। এরই মধ্যে আজাদ আর নর্মদার বিয়ে হয়। অন্যদিকে নর্মদার টিম বিক্রম রাঠৌরের পরিচয় জানতে তার ছবি স্ক্র্যাচ করতে শুরু করে। এই সময়ে আজাদের টিম দ্বিতীয় অপারেশনের পরিকল্পনা করে। যখোনে তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কিডন্যাপ করবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যা আজাদের দল। কে বা কারা নিয়েছে সেটা কেউ জানে না। এমনই একটি জায়গায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যেটা অত্যন্ত নির্জন। সেখান থেকে সরাসরি  লাইভ  করে হাইজ্যাককার  টিম। তারা দেশর স্বাস্থ্যখাতের বেহাল অবস্থা ও সীমাহীন দুর্নীতির কথা তুলে ধরে। এমনকি অক্সিজেনের অভাবে ৬০ জন শিশুর করুণ মৃত্যুর বিষয়টি সামনে আসে। এই মৃত্যুর জন্য সরকারে হাসপাতালে পদস্থ ডিন ও কর্মকর্তারা দায়ী হলেও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সরকারী হাসপাতালের সৎ চিকিৎসক ডা. ইরামকে চাকরিচ্যুত করে জেলে পাঠানো হয়।

হাইজ্যাককাররা যখন এই গল্পটি সবার সামনে তুলে ধরে তখন, স্বাস্থ্য বিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেটি স্বীকার করেন। তখন হাইজ্যাককার টিম থেকে এযাবৎকাল যতগুলো সরকারী হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে, বা বন্ধ হয়ে গেছে সবগুলোকে পাঁচ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় সচল করতে বলা হয় তা না হলে তার স্বাস্থ্যমমন্ত্রীকে জীবীত ফেরত দেবেনা। যেই কথা সেই কাজ এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যায় সবগুলো হাসাপাতাল। এই গল্পতো আামাদেরই। করোনার সময় আমরা কি দেখিনি রিজেন্ট শাহেদ,স্বাস্থ্যের হাজার কোটি টাকার মালিক গাড়ী চালক মালেক কিংবা ডা. সাবরিনাদের অপকর্ম! এসবের পেছেনে কি  কোনো কালী কগায়কোয়াড় নেই? সরকারের মন্ত্রী-সচিব নেই? অবশ্যই আছে

একাট সময় নর্মদা যখন জানতে পারে তার স্বামী আজাদই হাইজ্যাক মিশনের মুল হোতা তখন তিনি তার সতীর্থ ইরানিকে বলে আমাকে কৌশলে জেলে পাঠাও আমি আজাদের সঙ্গে কারা যুক্ত তাদের পরিচয় বের করবো। ইরানির কাছে নিজের মেয়ে সুচিকে বুঝিয়ে জেল ভেতরে আসামী হিসেবে প্রবেশ করে নর্মদা।ছ তবে নর্মদা জানে না তার সতীর্থ এনএসজি অফিসার ইরানি কালী গায়কোয়াড়ের সহযোগী।

বিক্রম রাঠৌ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একজন কমান্ডো ছিলেন। ৪০ ভারতীয় সৈন্যকে আক্রমণ ও হত্যার জন্য দায়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে খুঁজে বের করার জন্য একটি অভিযান শুরু করেছিলেন। বিক্রম লক্ষ্য করেন যে তাদের অস্ত্রগুলি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। অভিযানে গিয়ে ভারতীয় ৪০ সেনার মৃত্যূর কারণ ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্র।  তার দলকে অভিযানের সময় যখন শ্রেষ্ঠ পুরুষ্কার দেওয়া হয়, বিক্রম তখন দাবি করেন এই অস্ত্রগুলো যারা সরবরাহ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরে অস্ত্র সরবরাহকারী কালি গায়কোয়াড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিক্রম। ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহ করার দায়ে সেনাবাহিনী কালীর সঙ্গে অস্ত্র সরবরাহের চুক্তি বাতিল করে।

সেই রাতেই, বিক্রম এবং তার স্ত্রী ঐশ্বরিয়ার বাড়িতে হামলা চালায় কালি। একটি হেলিকপ্টারে করে কালি একটি বিমানে বিক্রমকে নিয়ে যান এবং তাকে গুলি করে হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দেন। হত্যা করেন। বিক্রম দেশদ্রোহী এমন একটি কাগজে ঐশ্বরিয়াকে কালীর বেতনভোগী পুলিশ অফিসার স্বাক্ষর করতে বলে ঐশ্বররিয়া তখন তিনজন পুলিশক হত্যা করে। হত্যার দায়ে ঐশ্বরিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে জন্ম হয় আজাদের। ঐশ্বরিয়াকে যখন মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় আজাদের বয়স তখন পাঁচ। তিনি তার ছেলে আজাদের কাছে বলে যান আজাদ বড় হয়ে যেন প্রমাণ করে তার বাবা বিক্রম নির্দোষ ও দেশপ্রেমিক। এই ঘটনা শোনার পর নর্মদা নিজেও আজাদের দলের হয়ে কাজ করতে চায়।

এভাবেই এগিয়ে চলে জাওয়ানের গল্প, এরই মধ্যে কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরে আসে আজাদের বাবা বিক্রম রাঠৌর যাকে সিনেমার প্রথম দৃশ্য মূমুর্ষ অবস্থায় পাহাড়ী এক নারী উদ্ধার করেছিলো। তিনি জানতে পারেন আজাদ তার ছেলে। কিন্তু তিনি এও বলেন, ‘আমি শুনেছি তুমি আমার ছেলে কিন্তু আমার ভেতরে সেই অনুভূতি হচ্ছে না।’  সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ভিলেন কালী গায়কোয়াড় তার ছেলে আজাদ মারার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন তখন তিনি তার উদ্যেশ্যে বলেন, ‘বেটে কো হাত লাগা নে সে পেহলে বাপসে বাত কার!’

অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ভোটের রাজনীতির যে সংস্কৃতি, সেটি সম্ভবত খুব ভালো করেই এই ছবিতে  দেখাতে পেরেছেন অ্যাটলি শাহরুখের বয়ানে সেসবই প্রাণ পেয়েছে। শুধু নিজ দেশ নয় রাজনীতির এমন কদাকার চেহারারা দেখিয়ে সব দেশের, সবার জন্যইই একটি মেসেজ রেখে গেছেন।

শেষ দেৃশ্যে আজাদ ব্যালট বক্স হাইজ্যাকের পর, আর কারো কাছে কোনো কিছু দাবি না করে। দেশের জনগনরে কাছেই একটি দাবি করে বসেন। তিনি জানান, আপনারা একটা পাঁচ টাকার কলম কেনার সময় কতবার এঁকে দেখন ঠিক ঠাক রেখা যাচ্ছে তো! দোকানদারকে প্রশ্ন করেন এটা দিয়ে লেখা যাবে যাবে তো? এমন প্রতিটা জিনিস কেনার সময় আপনারা কত নিশ্চয়তা চান। অথচ আপনার পাঁচ বছরের জন্য একটা দেশ কাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন সেটা নিয়ে আপনাদের কোনো প্রশ্ন নেই? তাহলে সরকারি হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার জন্য কারা দায়ী? একবার আপনার অন্তত এটা ভেবে নিজেদের ভোটটা দিন।

সিনেমার পিতা ও পুত্রের দুইটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান, কেন্দ্রীয় চরিত্রের বিপরীতে ছিলেন নয়নতার, অন্য একটি অতিথি চরিত্রে ছিলেন দীপিকা পাডুকুন। আর ভিলেন হিসেবে ছিলেন বিজয় সেথুপতি। এছাড়া আরও একটি অতিথি চরিত্রে ছিলেন সঞ্জয় দত্ত। তাদের অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।

একটি মানবিক পৃথিবীর জন্য দেশপ্রেম, শোষষমুক্ত সমাজ ও  অসাম্প্রদায়িক চেতনা কতটা জরুরি সেটাও আরও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন পরিচালক অ্যাটলি কুমার।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *