
ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। শুক্রবার রাত ১২টার পর হলগুলোতে এই বিক্ষোভ হয়। মাস্টারদা সূর্য সেন হল, মুহসীন হল, রোকেয়া হলসহ বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
এ সময় তারা ‘হল পলিটিকসের ঠিকানা/এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আবু সাঈদ, মুগ্ধ/শেষ হয়নি যুদ্ধ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
হলে কমিটি দেওয়ার প্রতিবাদে দুই দফায় বিক্ষোভ করেন রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা। বিকেলে কমিটি বাতিলের জন্য রাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে রাতে আবার বিক্ষোভ করেন তারা। রাত ১২টার পরও তাদের বিক্ষোভ চলছিল।
এর আগে, রোকেয়া হলে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়ার প্রতিবাদে বিকেলে হলের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিকেল ৫টায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে। বিক্ষোভকারীরা পদ পাওয়া ৮ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা রোকেয়া হলের প্রভোস্ট হুসনে আরা বেগমকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আধঘণ্টা সময় বেধে দেন।
রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের আদিবা সায়মা খান বলেন, ‘প্রভোস্ট বলেছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন ধরনের উপহারের মাধ্যমে হলে ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করতেই পারে। আমরা কোনো ধরনের গুপ্ত বা প্রকাশ্য রাজনীতি এই হলে চাই না। তার প্রতিবাদে প্রভোস্টকে আল্টিমেটাম দিয়েছি।’
আল্টিমেটামের সময় শেষে প্রভোস্ট হুসনে আরা বেগম বলেন, ‘আমি এই সিদ্ধান্ত একা নিতে পারি না। প্রক্টররা মিটিং করছেন। যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটাই হবে।’
‘প্রয়োজনে আমি পদত্যাগপত্রে সই করব, কিন্তু ওই আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না,’ বলেন তিনি।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদের দাবি পূরণের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
এরপর রোকেয়া হলসহ অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়ে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। রাত সোয়া ২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিক্ষোভকারী রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিয়ে চারটি দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো:
১. রোকেয়া হলকে প্রকাশ্য ও গুপ্ত—সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচিত হল সংসদ কমিটি ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন হলভিত্তিক কমিটি ঘোষণা করলে তাদের আবাসিক সিট বাতিল করতে হবে।
২. ছাত্রদল, বাগছাস, শিবির, ছাত্রী সংস্থা, ছাত্রলীগসহ (নিষিদ্ধ) অন্য সব ক্রিয়াশীল সংগঠন কোনো রকম গোপন কমিটি দিতে পারবে না। প্রমাণসাপেক্ষে তাদের সিট বাতিল করাসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩. ১৭ জুলাইয়ের স্মারকলিপিতে স্মারক নম্বর বসিয়ে আইনি ভিত্তি রচনা করতে হবে।
৪. প্রভোস্ট, হাউস টিউটর, কর্মচারীসহ হল কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের মেয়েদের সহযোগিতা করার প্রমাণ পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করবেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।
এ ছাড়া সুফিয়া কামাল হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীরাও হলে রাজনীতি বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এর আগে গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।