বুধবার, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

থানচিতে ভিজিডি-ভিডব্লিউবি সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পাচ্ছে না গ্রাহকরা

চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি (বান্দরবান) : বান্দরবানের থানচিতে ভিজিডি ও ভিডব্লিউবি কর্মসূচি আওতায় উপকারভোগী ১হাজার ২শত ২৪ জন দরিদ্র নারী তাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। দশ মাস হয়ে গেলেও এখনো নানা অজুহাতে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন।

সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের অফিস সহকারী (প্রয়াত) এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় দ্রুতভাবে তাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারীরা।

তারা জানান, ২০২৩-২৪ চক্রের দুই বছর ধরে প্রতি মাসে ২২০ টাকা করে সঞ্চয় জমা নিলেও নির্ধারিত সময় শেষে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। থানচি সদর ও বলীপাড়া ইউনিয়নের কয়েকজন উপকারভোগীদের দেওয়া হলেও দুর্গম তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নের কেউ এখনো পাননি।

সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ২২০ টাকা করে ২০২৩-২৪ চক্রে দুই বছরের সঞ্চয় জমা করেন ১হাজার ৬শত ৭৪জন উপকারভোগী নারীরা। চক্র মেয়াদ শেষে চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত দেননি। বিশেষ করে রেমাক্রী ও তিন্দু ইউনিয়নের নারী উপকারভোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মাসে পর মাস পেরিয়ে দশ মাস হয়ে গেলো, ভুক্তভোগীদের নানা অজুহাতে ঘুড়িয়ে রাখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের অফিস সহকারী (প্রয়াত) এমরান হোসেন জীবিত অবস্থায় উপকারভোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং পরে টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর থেকে ফেরত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দরিদ্র নারীদের তাদের দ্রুত সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মার্মা বলেন, “আমার ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের কিছু অংশের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে ৪ থেকে ৯নং ওয়ার্ডের নারীরা এখনো টাকা পাননি।” থানচি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অংপ্রু ম্রো জানান, “আমার ইউনিয়নের প্রায় ৬৯ হাজার টাকা এখনো বাকি রয়েছে, বাকিগুলো সব দেয়া হয়েছে।” তবে দুর্গম তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নের এপর্যন্ত কাউকে ফেরত দেওয়ার হয়নি বলে দাবির তাদের।

তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভাগ্যচন্দ্র ত্রিপুরা তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সংয়োগ হয়নি। অন্তত্য নেটওয়ার্ক বিহীন দুর্গম এলাকায় রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা (রনি) সাথে যোগাযোগ করে তাকেও মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সচেতনমহল ও এলাকাবাসীরা দরিদ্র নারীদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সরকারিভাবে দ্রুত তদন্ত করে আত্মসাতের ঘটনার কিংবা এত দেরি কারণে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আয়েশা আক্তার বলেন, “অফিস সহকারী হঠাৎ মারা যাওয়ার কারণে সঞ্চয় টাকা ফেরত কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ মাসের কাজ শুরু করতে পারলে আগামী মাসে সবার সঞ্চয় টাকা ফেরত দিতে পারবো।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-ফয়সাল জানান, “অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। প্রমাণ পেলে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে ব্যবস্থা পদক্ষেপ গ্রহণে ভুক্তভোগীদের ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।”

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ