
দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ থানার বহুল আলোচিত সাত মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি আশা আক্তার (২৬) অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন।
গত ২৪ আগস্ট বোচাগঞ্জ থানার একটি বিশেষ পুলিশ টিম আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানা সংলগ্ন গড়াই এলাকা থেকে তিনজন আসামিকে আটক করে।
আটককৃতরা হলেন— লাইসুর রহমান (৫৩), পিতা: মফির উদ্দিন।লিপি আক্তার (৪৫), স্বামী: লাইছুর রহমান।আশা আক্তার (২৬), পিতা: লাইসুর রহমান।অভিযানে নেতৃত্ব দেন বোচাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদ হাসান সরকার। তার নেতৃত্বে অংশ নেন এএসআই লেখন কুমার দাস, এএসআই সংকর কুমার রায় , এসআই আব্দুর রহমান ও কনস্টেবল আইয়ুব আলী।
তারা জীবন ঝুঁকি নিয়ে অপরিচিত স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। পরে ২৫ আগস্ট দুপুরে আটককৃতদের দিনাজপুর আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সাতটি মামলার মধ্যে দুটিতে লাইসুর রহমান, লিপি আক্তার ও আশা আক্তারকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দেন। তবে সিআর মামলা নং ২৫৪/২৪ ও সিআর মামলা নং ২৩৩/২৪ জামিন অযোগ্য হওয়ায় আদালতের সুযোগ্য ম্যাজিস্ট্রেট আবুয়াল মেহেদী তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর ফলে আশা আক্তারকে দোষী সাব্যস্ত করে দিনাজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাভোগরত আশা আক্তার বর্তমানে তার তিন কন্যা সন্তান—জান্নাতী আক্তার, পশুরাতি আক্তার ও মিম আক্তার—কে নিয়ে মানবিক বিবেচনায় জামিন চাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী বাদী আব্দুল মজিদ খান-এর নিকট আকুতি জানিয়ে তিনি শর্তসাপেক্ষে স্বীকারোক্তি ও অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে মুক্তি পাওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
আশা আক্তার আদালতে জানান, তিনি আর কখনো তার পিত্রালয় বা বাবা-মায়ের (লাইসুর রহমান ও লিপি আক্তার) কাছে ফিরবেন না এবং তাদের পরিচয় দেবেন না।
তার অভিযোগ, বাবা-মায়ের অর্থলোভী ও স্বার্থবাদী আচরণের কারণেই একের পর এক সংসার ভেঙে গেছে।আশা আক্তার এর আগে একাধিকবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও সংসার টেকেনি।
তার স্বামীদের মধ্যে রয়েছেন— ১. ফরহাদ হোসেন (পিতা আইয়ুব আলী বাবুর্চি) – দেড় বছর সংসার, এক কন্যাসন্তান (স্টেশনপাড়া উপজেলা রোড, বোচাগঞ্জ) ২. হাসিনুর রহমান (পিতা মো. মোস্তফা, সাইকেল মেকার) – আট মাস সংসার (বড় সুলতানপুর বাজার, নাফানগর, বোচাগঞ্জ) ৩. মোঃ রনি (পিতা মনির হোসেন, গুড় ব্যবসায়ী) – দীর্ঘদিন অবৈধ সংসার (গুচ্ছগ্রাম আবাসন, নাফানগর, বোচাগঞ্জ) ৪. মৃত শফিকুল ইসলাম (পিতা মৃত ইব্রাহিম) – ১৫ দিনের সংসার (রাণীশংকৈল বাজার, ঠাকুরগাঁও) ৫. মোঃ আব্দুল মজিদ খান (পিতা মৃত মহিউদ্দিন) – সাত বছরের সংসার, তিন কন্যাসন্তান (মুর্শিদাহাট মালিপাড়া, ৭ নং ওয়ার্ড, সেতাবগঞ্জ পৌরসভা, বোচাগঞ্জ) ৬. মৃত অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান (পিতা অজ্ঞাত) – ৭ দিনের সংসার (আমিরগঞ্জ নতুন বাজার, পার্বতীপুর, দিনাজপুর) ৭. মোঃ রুবেল হাসিব – দীর্ঘদিন অবৈধ সংসার (ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, ঢাকায় পট্টি, দিনাজপুর) ৮. মোঃ আলামিন (ট্রাক ড্রাইভার) – কোর্ট ম্যারেজ অনুযায়ী তিন মাসের সংসার (ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, বটতলা বাজার, দিনাজপুর) ৯. অ্যাডভোকেট আইনজীবী অনিমেষ রায় (পিতা অজ্ঞাত) ২ মাসের অবৈধ সংসারে সাড়ে ৩ মাসের গর্ভবতী হয় (ফরিদপুর জজ কোর্ট তৃতীয় তলা, থানা কোতোয়ালি, ফরিদপুর) ১০. শেখ রবিন, পিতা (শেখ শুকুর আলী) দেড় মাসের অবৈধ সংসার। ১১. শেখ শাহিন চায়ের দোকানদার পিতা মৃত নাসিরুদ্দিন ১৫ দিনের অবৈধ সংসার ১২. মোঃ রাসেল (আঃ মজিদ) তার সৎ ছেলে পরিচয় থাকাকালীন শুধুমাত্র এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও একটি স্বর্ণের চেইন দশ হাজার টাকার লোভে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে দীর্ঘদিন যাবত উভয়ের ঠিকানা (গুহলক্ষ্মীপুর মডেল টাউন, ১৭ নং ওয়ার্ড, আলিপুর খা পাড়া ব্রিজ সংলগ্ন, থানা কোতোয়ালি, ফরিদপুর) ১৩. মোঃ শাহলম, পিতা অজ্ঞাত দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সংসার (মির্জাপুর পোস্ট অফিস পাড়া, উপজেলা রোড, থানা মির্জাপুর, জেলা টাঙ্গাইল ১৪. মোঃ রুবেল, পিতা- অজ্ঞাত, দীর্ঘদিন অবৈধ সংসার উপজেলারোড, কুড়িগ্রাম।
আশা আক্তারের দাবি, তার সংসার ভাঙনের নেপথ্যে বাবা-মায়ের প্ররোচনাই মূল কারণ। এমন পরিস্থিতিতেও ভুক্তভোগী বাদী আব্দুল মজিদ খান মানবিক কারণে আশা আক্তারকে জামিনে মুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি আবারো সংসার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।