শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নরসিংদীতে পোস্টাল অপারেটরের ওপর হামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি

Oplus_131072

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর রায়পুরায় ডাকঘরের পোস্টাল অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম দুলাল (৪৫) এর ওপর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী আবিদ হাসান রুবেল ও তার বাহিনী বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মেথিকান্দাস্থ ভুক্তভোগীর বাড়িতে এ  সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডাকঘরের পোস্টাল অপারেটর জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই বাছেদ মেম্বার। এ সময় তার অপর চার ভাই উপস্থিত ছিলেন।

তারা হলেন- বড় ভাই নূর মোহাম্মদ মাস্টার, ছোট শাহজাহান ভূঁইয়া, মো. রোকনুজ্জামান ভূঁইয়া ও রউফ ভূঁইয়া।

লিখিত বক্তব্যে বাছেদ মেম্বার বলেন, গত ১৭ অক্টোবর বিকাল ৪টার দিকে আমার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম তার কর্মস্থল রাযপুরা পোস্ট অফিস থেকে চা খেতে বের হন। তিনি  বাজারের সড়কে উঠলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে একটি মাইক্রোবাসে উঁৎ পেতে থাকা আবিদ হাসান রুবেল (৩৫),  তার ভাই রেজাউল করিম টুটুলের নেতৃত্বে ১২ থেকে ১৪ জন সন্ত্রাসী গাড়ি থেকে নেমে পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোতে তুলে নেয়।  পরে তাকে শ্রীরামপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেনের বাড়ির পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন শেষে আফজাল হোসাইন ও হজরত আলী হরজুর নির্দেশে তাকে গ্র্যান্ডিং মেশিন দিয়ে তার ডান পায়ের গোড়ালির উপর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালির চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি ডান হাত হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলে। পরে নির্দেশদাতা আফজাল হোসেন ও হরজু কাজ শেষ যেকোনো সময় পুলিশ চলে আসতে পারে  বলে বলে সেখান থেকে চলে যায়। তারা যাওয়ার সময় জাহাঙ্গীর আলমের পকেট থেকে নগদ ৭ হাজার টাকা, একটি রেডমি ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল যার মূল্য ২৩ হাজার টাকা, একটি ফিচার ফোন যার মূল্য ২২০০ টাকা নিয়ে যায়। 

এদিকে জাহাঙ্গীর তার বাড়ির লোকজন এসে উদ্ধার করে স্থানীয় রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকায় প্রেরণ করে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার কারণে তাকে সারা জীবন পঙ্গু হয়ে থাকতে হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

জাহাঙ্গীরের ওপর এই হামলার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন, আবিদ হাসান রুবেল, তার বাবা হযরত আলী হরজু ও বড় ভাই কুকুসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ আরো দুই তিন জনকে অজ্ঞাত রেখে গত ২২ অক্টোবর  রায়পুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মৃত আক্রব আলী কেরানীর ছেলে আফজাল হোসাইন (৭২), মৃত সামসুল হকের ছেলে হযরত আলী হরজু, তার ছেলে আবিদ হাসান রুবেল (৩৫) ও রেজাউল করিম টুটুল (৩৮),   মোহাম্মদ আলী ছেলে জুয়েল (৩০),  মৃত সামসুল হকের  ছেলে মানিক মিয়া (৫০), খলিল মিয়ার সাকিব (২০) আবিদ হাসান রুবেলের ছেলে আরিয়ান (১৮), মৃত বজলু মিয়ার ছেলে  রাসেল (৩৫), মৃত দারু মিয়ার ছেলে এনামুল হক (৩২),  জয়নালের ছেলে জার্মাল (৪০), মানিক মিয়ার ছেলে   কাউছার (২৩),  লিটন মিয়ার ছেলে নাসির (২২),  মৃত বজলু মিয়ার শাামিম (৩২) সহ আরও ২/৩ জন সবাই উপজেলার  চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের নজরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, এজাহার ভুক্ত আসামিরা তাদের খেয়াল খুশি মত রায়পুরায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। যখন যাকে ইচ্ছে ধরে এনে মারধরসহ হাত-পা ভাঙার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয় যেদিন জাহাঙ্গীর আলম এর ওপর হামলা চালানো হয় সেদিনই উপজেলার হরিপুর গ্রামের শফিউল্লাহ নামে এক প্রকৌশলীকে গুলি করে হত্যা করে এই বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ নজরপুর গ্রামের আজিজ মিয়ার বাড়ির সামনে পাকা রাস্তা থেকে নিহত শফিউল্লাহর মরদেহ  উদ্ধার করে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে এই সন্ত্রাসী বাহিনীর কোনো সদস্যকে এ হত্যা মামলায় না জড়িয়ে একটি নিরীহ পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে শফিউল্লাহর পিতা। 

ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলমের অপর ভাই শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, এই রুবেল বাহিনী সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় এই ঘটনার পর আমার বাকি তিন ভাই রয়েছি। আমাদেরকেও  জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে।  এর আগে আমাদের পরিবারের আমার ভাতিজা মোমেন মারুফ,  শরিফুল, আরেক,  মনিরসহ বেশ কয়েকজনকে গুলি করে আহত করেছে। অনেককে করেছে পঙ্গু।  আর এসব ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে এর জেরে গত ১৩ আগস্ট রায়পুরা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি দৈনিক রূপান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি  সাংবাদিক মনির হোসেনকে গুলি করে আহত করে। সেও বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় দিনযাপন করছে। সাংবাদিক মনির আহত হওয়ার পর দেশের প্রায় সকল পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়ে। কোনো এক অদৃশ্য শক্তির বলে আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে রায়পুরার এই চিহ্নিত সন্ত্রাসী রুবেল ও তার বাহিনী। একের পর এক ঘটনা ঘটাতে থাকলেও পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছে না। 

আমরা এ ব্যাপারে চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাদক কারবারি ভূমিদস্যু আবিদ হাসান রুবেল ও তার বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার তরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। 

জাহাঙ্গীর আলম এর ওপর হামলার দিন নজরপুরে গুলিতে নিহত হওয়া শফিউল্লাহ হত্যা মামলার বাদী আলী আকবর এর মোবাইলে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হত্যার বিষয়টা জানতে চাইলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। 

এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল জব্বার বলেন, এ বাহিনীর সদস্যদেরকে কেবল আমরাই নই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য বাহিনীগুলো তৎপর রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই তারা আইনের আওতায় আসবে। শফিউল্লাহ হত্যার পর  ঘটনাস্থল থেকে আমরা মরদেহ উদ্ধার করি। এরপর থেকে নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেছি। মামলা করার কথা বলেছি।  কিন্তু তারা থানায় এসে মামলা না করে কার প্ররোচনায় আদালতে মামলা করেছে সেটা আমার জানার কথা নয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ