মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নেতানিয়াহুর বক্তব্য ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন বিশ্ব নেতারা

যায়যায়কাল ডেস্ক: জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বিবিসি ও আল জাজিরা বলছে, এসময় অধিবেশনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের কয়েক ডজন প্রতিনিধি প্রতিবাদস্বরূপ ওয়াকআউট করেন।

এরপর নেতানিয়াহু প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, গাজায় হামাস দুর্বল হলেও তারা এখনো হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে এবং ৭ অক্টোবরের মতো আবারও হামলার অঙ্গীকার করছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের দৃঢ়তা, সেনাদের সাহসিকতা এবং আমাদের সাহসী সিদ্ধান্তের জন্যই ইসরায়েল তার অন্ধকারতম দিন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে— এটি ইতিহাসের অন্যতম সেরা সামরিক প্রত্যাবর্তন।’

নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, ‘তবে আমরা এখনো যুদ্ধ শেষ করিনি।’

নেতানিয়াহু পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, যারা সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তারা ‘ভয়ানক ভুল’ করেছে।

তার ভাষ্যে, ‘আপনারা ভালো কিছু করেননি, বরং একটি ভয়াবহ ভুল করেছেন। এই সিদ্ধান্ত আরও সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করবে।’

তিনি দাবি করেন, এই স্বীকৃতি মূলত হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোকে পুরস্কৃত করছে।

যদিও ইতোমধ্যেই ১৫৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আঞ্চলিক হামলা ও গুপ্তহত্যার মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছেন বলে জানান নেতানিয়াহু।

বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে পেজারের কথা? আমরা হিজবুল্লাহকে আক্রমণ করেছি এবং বিশ্বাস করুন, তারা আমাদের বার্তা পেয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনে ইসরায়েলের ভূমিকা আছে।

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ, হামাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, হুতি নেতা এবং ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যার কৃতিত্বও ইসরায়েলের।

যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো মিত্র দেশগুলোও ইসরায়েলের সমালোচনা করছে। অনেকেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তবে নেতানিয়াহুর ভাষ্য, ‘তারা জানে, ইসরায়েল আসলে তাদের যুদ্ধই লড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক নেতা যারা আমাদের প্রকাশ্যে নিন্দা করে, তারাই আবার গোপনে ধন্যবাদ জানায়— কারণ আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কারণে বহুবার তাদের রাজধানীতে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত হয়েছে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এ অভিযোগ সমর্থন পেয়েছে।

তবে এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

বলেন, ‘একটা দেশ যদি সত্যি গণহত্যা চালাতে চাইত, তবে তারা কি আগে থেকেই বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যেতে বলত?’

তবে বাস্তবতা হলো— গাজায় ৯০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত। সেখানকার হাসপাতাল, স্কুল ও শরণার্থী শিবির— এমন অনেক বেসামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার নজির রয়েছে।

ভাষণের শেষে নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই যুদ্ধই শেষপর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বয়ে আনবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজয় আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের (ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি) প্রসার ঘটাবে।’

নেতানিয়াহু ইসরায়েল-লেবানন ও ইসরায়েল-সিরিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনার কথাও বলেন, যদিও এই দুই দেশই ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুদ্ধ ও হামলার কারণে সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কের সম্ভাবনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ