
নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনা পৌর শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বারহাট্টা রোড হয়ে রাজুর বাজার মোড় পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে ভাঙন।
মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে উঠে যাচ্ছে পিচ, সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ফাটল, কোথাও আবার ধসে পড়ছে রাস্তার অংশ বিশেষ। ৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে এমন নাজুক অবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। কিন্তু কাজের সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভাটিবাংলার নামে মো. সনি খান। যিনি সাবেক পৌর মেয়র ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী নজরুল ইসলাম খানের চাচা।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এবং পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী হুমায়ুন কবিরের সহযোগিতায় তিনি নিম্নমানের কাজ বাস্তবায়ন করেছেন।
প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ৯১৫ মিটার। প্রাথমিক বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, পরে বাড়িয়ে তা করা হয় ৪ কোটিরও বেশি। কিন্তু বরাদ্দ বাড়লেও গুণগত মান নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। সাংবাদিকদের এক সরেজমিন তদন্তদলে দেখা যায়, বিটুমিনের মান ছিল নিচু, রোলিং ও কম্প্যাক্টিং সঠিকভাবে হয়নি, এমনকি গভীরতা ও প্রস্থতেও অনিয়ম স্পষ্ট।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ‘সিন্ডিকেট’ এর মাধ্যমেই সরকারের অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। এখন প্রশাসনিক তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে।
এক ব্যবসায়ী জানান, “রাস্তার অবস্থার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা হচ্ছে। কিছু বলতে গেলে হুমকি আসে।”
আরও কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, “সরকার বদলেছে, এখন সময় জবাবদিহির। কেউ যেন ছাড় না পায়।”
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, “রাস্তার নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়নি। কিছু জায়গায় জয়েন্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা পুনরায় মেরামত করে দেওয়া হবে।” তিনি এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ‘অমূলক’ বলে দাবি করেন।
তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন—যেখানে কোটি কোটি টাকার বাজেটের কাজ তিন মাসেই ধসে পড়ে, সেখানে শুধু ‘মেরামত’ কি যথেষ্ট? তারা বলছেন, কেবল চাকরিচ্যুতিই নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে কঠোর তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে ভবিষ্যতের জন্য বার্তা দিতে।
পৌরসভার অন্য কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন—এই দুর্নীতি চক্র ভাঙবে কে?