
মেহেদী হাসান নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি : নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় এবার আগাম বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সোনালি আঁশ পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে যার ফলে ক্রমেই পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা আপাতত খুশি। তবে ভাল ফলনে দাম নিয়ে হতাশায় ভুগছেন স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলায় ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে পাট কাটার কাজ শেষ করেছে। এরই মধ্যে মুক্ত জলাশয়ে জাঁক দেয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর ও শুকানো কাজ শেষ করে বিক্রির চিন্তা করছেন। কিন্তু দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা। সরকারি ও বেসরকারি পাটকল গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ও হতাশায় পড়েছেন সাধারণ কৃষকেরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়: কয়েক বছর আগেও চাষিরা পাট চাষ করে লোকসানে পড়েছিলেন। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়েন। মাঝে স্বল্প পরিসরে যারা আবাদ ধরে রেখেছিলেন,তারাই লাভবান হয়েছেন। তাদের দেখেই অন্যরা আবারো পাট চাষে ফিরেছেন।গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমের শুরুতেই চাষিরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন।এতে পাটের আবাদ বেড়েছে অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে।কিন্তু এ বছর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রহিম নামে পাটচাষি বলেন: এবার আমার জমির ৫০শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছি । আমি প্রতি বছরই পাট চাষ করে থাকি। ফলন এবার ভাল হয়েছে।কঠিন পরিশ্রম করে পাট আবাদ করি। কিন্তু বর্তমান বাজারে পাটের দাম অনেক কম। এতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।
ইসলাম উদ্দিন নামে আরেক পাটচাষি বলেন: গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করে কিছুটা লাভ করতে পেরে এবার আবাদ বাড়িয়েছি। কিন্তু এখন দেখছি আগের থেকে ১ হাজার টাকা কমে গেছে পাটের দাম পাটের উৎপদন খরচ আর বদলি খরচ বাবদ ৫০০ টাকা খরচসহ বর্তমানে যে পাটের বাজার মূল্য তাতে লোকশানের মুখে পড়তে হবে। সরকার যদি পাটের দাম না বাড়ায় তাহলে আমাদের পাটের আবাদ থেকে সরে আসতে হবে। সরকারের উচিত পাটের মূল্যা বাড়ানো।
পাটের ফলন ভাল হওয়ায় এলাকার মৌসুমি শ্রমিকদের ব্যস্ততা ও বেড়েছে। এক আঁটি জাঁক দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে ২০টাকা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে দিনে ১০০ থেকে ১২০ টাকা টাকার মতো আয় হয় তাদের এদিকে পাইকাররা বলছেন: মিল মালিকেরা পাটের সঠিক দাম না দেয়ার পাশাপাশি গত বছরের বকেয়া বিল থাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে পাট ক্রয় করতে হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়: গত বছর প্রতি মণ পাট ২হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও বর্তমানে তা ১ হাজার টাকা কমে ২হাজারের নিচে নেমে এসেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে আশাকরি পাটের যে সোনালী দিন ছিলো সেটা আমরা খুব কম সময়ের মধ্যেই ফিরে যেতে পারবো।
এ জেলায় পাট উৎপাদন ভালো হওয়ায় চাষিদের নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এবার আশা করছি ন্যায্য দাম পেলে কৃষক লাভবান হবেন। সে ক্ষেত্রে সামনের বছরে আরো দ্বিগুণ জমিতে পাট উৎপাদনে ঝুঁকবে কৃষকরা। পাটের লক্ষ্যমাত্রাও দ্বিগুন অর্জন হবে পাশাপাশি পাটের উৎপাদনও বাড়বে।