মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পাহাড়ের ঢালে সোনালি রঙে দুলছে ধানের ক্ষেত!

চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি (বান্দরবান): বান্দরবানের থানচিতে জুমচাষীদের পাহাড়ের ঢালে উৎপাদিত জুমের পাকা ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। এবছর সময়মতো বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো। ধান কাটার এই উৎসবে ঘিরে এখন গোটা উপজেলাজুড়ে জুমচাষীদের চলছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।
স্থানীয় জুমচাষীদের ভাষ্যমতে, পাহাড়ি আদিবাসীদের জুমের শুধু ধান নয়, জুমক্ষেতে একসঙ্গেই ফলানো হয় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ রকমের সাথী ফসল। ধান কাটার আগে থেকেই শুরু হয়– জুমের ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, সাদা কুমড়া, ঢেঁড়স, করল্লা, টকপাতা, মারফা, তিল ও ওলকচুসহ বিভিন্ন সবজি সংগ্রহের কাজ। এখন জুমচাষিরা ধান কাটার ব্যস্ত সময় পার করেছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে জমি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। জানুয়ারিতে জঙ্গল কেটে, মার্চ-এপ্রিলে তা শুকিয়ে পোড়ানো হয়। এপ্রিল-মে মাসে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি শুরু হলে বপন করা হতো ধানসহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের সাথী ফসল। আগস্টের শেষ থেকে শুরু ধান কাটা, চলে অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঘরে ঘরে পালিত হবে নবান্ন উৎসব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছর (বর্তমান মৌসুম) আবাদ হয়েছে প্রায় ২,১৩৬ হেক্টরে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩,১৫৮ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, থানচি সদরে আশেপাশে চাইয়াং পাড়া, ছান্দাক পাড়া, মেকহা পাড়া, সুব্রাইনী পাড়া, আপ্রুমং পাড়া, হালিরাম পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানের জুমচাষীদের জুমের ধান কাটার শুরু করেছে। এবং উপজেলা সদরসহ বলিপাড়া, তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নের কারো কারো জুমের ধান পাকা শুরু আবার কাটাও শুরু করেছেন জুমচাষিরা।
জুমচাষি মেনলে ম্রো:, খয়মংপ্রু মারমা, রাঙতোয়া ত্রিপুরাসহ অনেকেই বলেছেন, এবছরে যথাসময়ে বৃষ্টি ও রোদের কারণে ফলন মোটামুটি ভালো হচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সংরক্ষণ করে আসছেন স্থানীয় ধানের জাত— বড় ধান, মংথং, গেলন, কংপ্রক, পিডি, কালো বিন্নি, লাল বিন্নি ইত্যাদি জাতের ধান। পাহাড়ি এই ঐতিহ্য আজও জীবন্ত জুম আবাদে। পাহাড়ে জুমক্ষেতে এখন সোনালি রঙে রঙিন— থানচির দুর্গম জনপদে এ যেন ফসল উৎসব। জুম আবাদ শুধু ফসল নয়, এটিই আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিরও অঙ্গ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার বিশ্বজিৎ দাশ গুপ্ত বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। তাতেই সাঙ্গু নদীর তীরে ধানের রোপনসহ জুমের ফলন ভালো হয়েছে। এবছরে জুমচাষীদের জুমফসল আশানুরূপ হবে বলে জানান তিনি।
থানচি উপজেলা কৃষি অফিসার মো: ওয়ালিদ হোসেন জানান, পাহাড়ি জুমখেতের পাকা ধানের কাটা শুরু করেছে। দুর্গম এলাকায় তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নেও জুমের ধান ফলন ভালো হয়েছে। যথাসময়ে বৃষ্টি আর রোদের কারণে চাষিদের এবছরের আশানুরূপ জুমফলন পাবে।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ