মো. মাহফুজুর রহমান বিপ্লব, ফরিদপুর: ১০ হাজার টাকা জমা দিলে লোন পাবেন এক লক্ষ টাকা, ৫ হাজার টাকা জমা দিলে পাবেন ৫০ হাজার টাকা। পরিশোধের সময় দুই বছর। এমন সব প্রলোভন দেখিয়ে ফরিদপুরে শত শত মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে হঠাৎ উধাও ‘প্রত্যাশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা(এনজিও)।
জানা যায়, এনজিও কর্মকর্তার লোন দেয়ার দিনক্ষণ দিলেও সেটা পার হয়ে তিন-চার দিন হয়ে গেলে লোন না পেয়ে অফিসের দুই কর্মচারীকে আটক করেন জনগণ। খবর পেয়ে দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করেন কোতায়ালী থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, মাত্র এক মাস আগে ফরিদপুর শহরের ৯নং ওয়ার্ডের রঘুনন্দনপুরে ফরিদপুর হাউসিং স্টেটে ছায়াবীথি-মমতা ভবনে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ‘প্রত্যাশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা(এনজিও) পরিচয়ে কার্যক্রম শুরু করে।
শহর থেকে গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সাধারণ মানুষের মাঝে তাদের চমৎকার প্রলোভন তুলে ধরেন। মানুষ সেই ফাঁদে পড়েন।বিশ্বাস রেখে তাদেরকে টাকা প্রদান করেন। হাভেলি গোপালপুর, গোয়ালচামট, রঘুনন্দনপুর সহ বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা।
ভুক্তভুগীরা জানায়, লোন পাবার আশায় ধার দেনা হয়ে টাকা দিয়েছি তাদের। এমন অবস্থায় পরিবার নিয়ে বিপদের সমুখে পড়তে হচ্ছে। এ ঘটনায় তারা সুষ্ঠু বিচার দাবি জানায়।
এদিকে আটক হওয়া দুই কর্মচারীর জানান, তারাও ওই প্রতিষ্ঠানের বড় বড় কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রতারিত। নানা প্রলোভনে তাদেরকে চাকরি দিয়েও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে টাকা। তারা টাকা হাতিয়ে নেয়ার সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করছেন।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আশরাফ জানান, মঙ্গলবার ৮টার দিকে আটককৃত দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহ ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের করা হবে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৭৪/১৯৯৮ ইং লেখা থাকলেও সেটি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তিন জনের নাম উল্লেখসহ বেশ কয়েক জনকে আসামী করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
প্রত্যাশা সমাজ কল্যান সংস্থার নামক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. বাবুল আকতার, ম্যানেজার মো. আরিফুল ইসলাম, সিনিয়র মাঠ কর্মী ফেরদৌস আরানহ ঐ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারী এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে থানায় অভিযোগ করা হয়। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
ভুক্তভোগীরা আরও জানা, প্রতারক চক্র আগামী বৃহস্পতিবার ঋণ দেবার কথা বলে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও ঋণ গ্রহন বাবদ অগ্রিম ১০ শতাংশ টাকা গ্রহণ করে। এদের মধ্যে আফরোজা বেগমের ৩০ হাজার ৬শ’ টাকা, নুরুন্নাহারের নিকট থেকে ২০ হাজার ৬শ’ টাকা, রুবিনা বেগমকে ৭ লাখ টাকা ঋণ দেবার কথা বলে ৭০ হাজার টাকাসহ সমিতির অন্যান্য সদস্য কাছ থেকে বহু টাকা আত্মসাৎ করে এই চক্রটি।