
রকিবুজ্জামান, মাদারীপুর: মাদারীপুরের কালকিনিতে বন্ধ করে দেওয়া হলো দুইশতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ীর মেলা। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো এ মেলা প্রতিবছর কালিপূজায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর তা আর হচ্ছে না।
প্রশাসনের দাবি, স্থানীয় জনগণ ও আলেম সমাজ এ মেলা আয়োজনে আপত্তি জানানোর কারণে প্রশাসন মেলা আয়োজনে অনুমতি দেয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ।
এ বিষয়ে কালকিনি পৌরসভা হতে মেলা আয়োজনের ইজারাদার আকবর হোসেন বলেন, ‘প্রায় আড়াইশ বছর ধরে কুণ্ডুবাড়ীর মেলা হয়ে আসছে। কেউ কোনোদিন কোনো প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু এবার প্রশাসনের কাছে হুজুররা (আলেম সমাজ) আইন‑শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করে মেলা না করার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।আমাকেও তারা মেলা না করার জন্য নিষেধ করেছে।’
মেলার ইজারাদার আকবর হোসেন আরও বলেন, ‘আমি পৌরসভা থেকে মেলার ইজারা নিয়ে কয়েকশ দোকানির কাছে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছি। এসব দোকানিরা লাখ লাখ টাকা ঋণ করে মেলায় মালামাল বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। এখন এই মেলা না হলে এসব মালামাল বিক্রি করতে না পেরে তারা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়বে। তাছাড়া আমারও আর্থিক অনেক ক্ষতি হবে। এ বিষয়ে আমি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
এ বছর মেলা না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে কুন্ডুবাড়ি মন্দির কমিটির উপদেষ্টা বাসু দেব কুণ্ডু বলেন, ‘দিপাবলী ও শ্রী শ্রী কালিপূজা উপলক্ষে পূর্বপুরুষেরা আমাদের বাড়িতে এই মেলা আয়োজন করে আসছে। এবার মেলা কারা বন্ধ করে দিয়েছে এটি আপনারা খুঁজে বের করুন। এটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনাদের। আর বেশি কিছু বলে আমরা বিপদে পড়তে চাই না। এবার আমরা আমাদের পূজা নিয়েই থাকব।’

এবার মেলা বন্ধ করার বিষয়ে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটার কুণ্ডুবাড়ীতে কালিপূজাকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।এবারও এ মেলা অনুষ্ঠানের জন্য কালকিনি পৌরসভা থেকে আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় আলেম সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধিরা মেলায় আইন‑শৃঙ্খলার অবনতিসহ বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে মেলা বন্ধ করার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কালকিনি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন এবার মেলার আয়োজন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কুণ্ডুবাড়ীর কালিপূজা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।শুধু পূজাকে কেন্দ্র করে হওয়া মেলাটি বন্ধ থাকবে।’
এদিকে এবছর মেলা না হওয়ায় স্থানীয় অনেকেই অখুশি হলেও কেউ ভয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।
কালকিনি উপজেলার ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই কুণ্ডুবাড়ীর মেলায় যাই। মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনি। কালের পরিক্রমায় আমি আমার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়েও এই মেলায় অনেকবার গিয়েছি। কই কখনো তো কোনো ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কথা শুনিনি। কিন্তু এবার শুনতেছি অনেকে মেলা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। আসলে এসব ঐতিহ্যবাহী বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না।’