মশিয়ার রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি: নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষে বেড়েছে কৃষকদের।
বাড়ির আঙিনা,ছাদ,অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় মাটি ভরে কিংবা টবে আদা চাষ হচ্ছে। এতে গ্রামের অসহায় জনগন আদা চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষকরা এই মসলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘরে ঘরে বস্তায় আদা চাষ করছেন।
মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে বাড়তি লাভের আশায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলঢাকা উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন এই এলাকার কৃষকরা । সফলতা পেলে ভবিষ্যতে এভাবে আদার চাষের পরিধি আরো বাড়বে।
উপজেলার গোলমুন্ডা, কৈইমারী, মীরগঞ্জ, গোলনা,বালাগ্রাম এলাকা ঘুরে দেখে গেছে কৃষকরা বাড়ির আশপাশে বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এদের মধ্যে ভাবনচুর গ্রামের কৃষক শাহআলম বাড়ির পাশে পতিত জমিতে সাড়িবদ্ধভাবে প্রথম বারের মতো ৩ শত এর বেশি বস্তায় আদা চাষ করেছেন।
তার দেখে ওই গ্রামের আমিনুর রহমান সহ বহু ব্যক্তি বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এসব আদা লাগিয়েছে এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
শাহ আলম জানান, আদা চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তা স্থানান্তর করা যায় বলে অতিবৃষ্টি বা বন্যার পানি জমে ফসল নষ্ট হয় না। রোগের আক্রমনও কম হয়। বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত ও ছায়া যুক্ত জায়গা কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করা যায় আদা চাষ করে।
তিনি বলেন, এক বস্তায় ২৫/৩০ টাকা খরচ করলে ১ হাজার টাকার আদা বিক্রি করা সম্ভব। পতিত জমিতে চাষ, অতি অল্প খরচ ও অধিক লাভজনক পদ্ধতি এই বস্তায় আদা চাষ প্রকল্প। এতে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
বস্তায় আদার চাষ বিষয়ে কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, বস্তায় আদা লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যে চারা বের হয়ে দ্রুত বেড়ে উঠছে আদা গাছগুলো। বাড়ির পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগিয়ে লাভের স্বপ্ন দেখছি আমি। সাড়িবদ্ধভাবে বস্তায় সবুজ আদা গাছ দেখতে এসে অনেকে মুগ্ধ হচ্ছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল সরকার জানান, মাটির সঙ্গে গোবর সার, খৈল, ছাই সহ রাসায়নিক সার মিশিয়ে কৃষকরা পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এজন্য তাদেরকে সর্বক্ষনিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। অল্প খরচে অধিক লাভজনক পদ্ধতি এটি।
জলঢাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন আহম্মেদ জানান, বস্তায় আদা চাষ করলে বাড়তি ফসলি জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয়। আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্ধুদ্ধ করছি এবং সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে বস্তায় আদার চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক বাড়তি আয়ও করতে পারে।
এই উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।