মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিজয়নগরে প্রতারকের ফাঁদে পড়ে গৃহবধূ সর্বহারা

কাজী আল আমিন, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুল জাহের এর ছেলে লিটন মিয়া (৪০)’র ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারালেন একই উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের ২২ বছর বয়সী এক প্রবাসীর বধূ।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের প্রবাসী ফজলুর রহমানের সাথে পারিবারিকভাবে টেলিফোনে যুবতীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রবাসে থাকাকালে ফজলুর রহমান তার স্ত্রীকে ঘরে উঠান। বাড়িতে একটা পাকা ঘর উঠানোর জন্য রাজমিস্ত্রি লিটন মিয়াকে দায়িত্ব দেন। লিটন মিয়া পাহাড়পুর ইউনিয়নের গিলামুরা গ্রামের মৃত আব্দুল জাহেরের ছেলে।

লিটন দায়িত্ব পেয়ে নববধূর সাথে প্রতিদিন কাজের কথাবার্তা বলার সুযোগে প্রবাসী স্বামীর নানা দোষ বলেন। বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখিয়ে ফুসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই লিটন বিবাহিত জানতে পেরে গৃহবধূ ভুল বুঝতে পেরে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। লিটন তখনই শুরু করে শত্রুতার আচরণ। প্রবাসী স্বামী দেশে আসার দশ দিন আগে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে স্ত্রীকে ঘরে উঠাবেন এই ভেবে।

এদিকে প্রতারক লিটন গৃহবধূর প্রবাসী স্বামীকে ফোনে জানান, তুমি কার স্ত্রীকে ঘরে উঠাবে, সে তো আমার বিবাহিত স্ত্রী। এরকম কিছু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রবাসী স্বামীর সংসার থেকে অসহায় গৃহবধূকে স্বামীর সংসার থেকে বিচ্ছেদ ঘটান। গৃহবধূ উপায়ান্তর না দেখে ২০২৪ সালের ৩ জুলাই লিটনের সাথে আদালতে ৫ লক্ষ টাকা কাবিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। লিটন তার স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিশ্রুতি ছিল পরিস্থিতি শান্ত হলে তাকে ঘরে উঠাবেন। এদিকে মিষ্টিভাসী লিটন শ্বশুরবাড়িতে আসা-যাওয়া করতে থাকেন। মাসেক পর আবারো নতুন কাহিনি। প্রতারণার শিকার নারী জানতে পারেন লিটনের তিনটি সন্তান রয়েছে। এখন গৃহবধূর জীবন নিয়ে বাঁচাটাই যেন চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। উপায়ান্তর না দেখে সিদ্ধান্ত নেন, লিটনের সংসার করবেন। এদিকে লিটন তার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্তার কথা শুনে পাঁচ মাস যাবত সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। উল্টো ৩ লক্ষ টাকার দাবি জানান তার ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধ করার জন্য। অসহায় নারীর বাবা ও উপযুক্ত অভিভাবক নেই। দুটি ভাই থাকলেও অটোরিকশা চালিয়ে কোনোরকম দিন যাপন করেন। ভুক্তভোগী গৃহবধূ এখন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পাচ্ছেন না নিয়মিত ওষুধ ও খাবার, না পাচ্ছে সময়োপযোগী সেবা। ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ এখন দরজায় দরজায় ঘুরছেন প্রতারণার বিচার পাওয়ার জন্য।

থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে বর্তমানে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনে আইনে মামলা দায়ের করেছেন ওই গৃহবধূ।

বিজয়নগরের সমবায় কর্মকর্তা উভয় পক্ষের সম্মতিতে সালিশের মাধ্যমে ভরণপোষণ ও অসমাপ্ত কাবিননামায় স্বাক্ষর করতে। স্বীকারোক্তি দিয়ে দুই মাস অতিবাহিত হলেও প্রতারক লিটনকে পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমি এখন কোসো জায়গায় স্থান পাইতেছি না। প্রতারক লিটন এর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই। যাতে করে তার এই দৃষ্টান্তে অন্য কোনো প্রতারক এভাবে কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট না করতে পারে।

অভিযুক্ত লিটন মিয়া বলেন, সালিশের পর প্রথম মাসে ১৫০০ ও দ্বিতীয় মাসে ৫০০ টাকা দিয়েছি।

স্বীকারোক্তিতে বলেন তিনি কাবিননামায় স্বাক্ষর করেনি। এবং সাংবাদিককে উল্টা হুমকি দিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে উপজেলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, সত্য উন্মোচনে গোপনীয়তা রক্ষায় মামলার সুষ্ঠু তদন্ত কাজ চলমান আছে। ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পাবেন বলে জানান তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ