রবিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা ছড়িয়ে বাংলাদেশের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চেয়েছিল: জামায়াত আমির

শাহ ইমরান, কুমিল্লা: জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য আমরা সরকারকারকে সময় দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও দেব। তবে মৌলিক সংস্কার করে যৌক্তিক সময় নির্বাচন দিতে হবে। ২০২৪ সালের জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। তবে আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না। পরাজিত শক্তি এখনও বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় মিথ্যাচার চালিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু এ দেশের মানুষ তাদের সে পাতা ফাঁদে পায় দেয়নি। দেশের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কাউকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। সবার পরিচয় হবে আমরা বাংলাদেশি। কুমিল্লা নামে বিভাগ না দেয়ায় বিগত সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন নামের কারণে বিভাগ না দিয়ে একটি জেলার মানুষের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। দেশের এক ইঞ্চি মাটির প্রতি অবজ্ঞাকারী কোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা নেই। তিনি কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এছাড়াও কুমিল্লা বিমানবন্দর সচলের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন তিনি।

শুক্রবার সকালে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে মহানগরী জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করে মহানগরী জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। মহানগরী নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন ও সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমানের যৌথ পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, চাকসুর সাবেক ভিপি অ্যাডভোকট জসীমউদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মু. আবদুর রব, মোবারক হোসেন প্রমুখ। শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করেন মহানগরী মজলিসে শুরা সদস্য ড. আবরার আহম্মদ।

সমাবেশের উদ্বোধন করেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ মাছুম মিয়ার পিতা শাহীর মিয়া। দীর্ঘ ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সমাবেশ উপলক্ষে গত কয়েকদিন থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালায় জামায়াত। দলীয় আমিরকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো নগরী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড ও ৬টি ইউনিয়ন থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে পুরুষদের জন্য টাউনহল মাঠ ও নারীদের জন্য নির্ধারিত কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলো না। এক পর্যায়ে কর্মী সমাবেশ জনসমাবেশে রূপ নেয়। পুরুষদের প্যান্ডেল টাউনহল মাঠের আশপাশের এলাকা পূবালী চত্বর, লিবার্টি মোড়, জিলা স্কুলের সামনের রাস্তা, মনোহরপুর, বাদুড়তলা ও লাকসাম রোডের পুরো রাস্তাই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। অপরদিকে নারীদের জন্য নির্ধারিত ঈদগাহ মাঠেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় সিটি পার্ক মোড় ও প্রেস ক্লাবসহ আশাপাশের এলাকাও নারী কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

জামায়াত আমির বলেন, গত সাড়ে ১৬ বছর আদালত আঙ্গিনা ছিলো বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দখলে। মূলত পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অস্তিত্ব ধ্বংস করার মিশন শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিলো না। বিশেষ করে জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশি অবিচার করা হয়। আমাদের শীর্ষ নেতাদের একে একে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাগারের রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমাদের কার্যালয়গুলো অন্যায়ভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে এতো নির্যাতনের পরও আল্লাহর রহমত ও নেতাকর্মীদের ত্যাগের বিবিনিময়ে আমরা টিকে আছি। শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ নেই। দেশের প্রশ্নে জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ।

তিনি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বলেন, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে নিজস্ব অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীরা যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা পাবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাইকে মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, বিগত দিনে পুলিশের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াত। তারপরও আমরা প্রতিশোধপরায়ন হইনি। আমরা সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।

গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, সব সময় সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে হবে। অন্যায়কারী যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। অন্যায়কারী হলে আমার বিরুদ্ধেও লিখবেন।

তিনি বলেন, ২৪ এর আন্দোলনের মূল সেনাপতি ছিলেন শিক্ষার্থীরা। আমরা শুধু তাদের পাশে থেকে পানি পান করিয়েছি। নেতাকর্মীদের চরিত্র গঠনের পাশাপাশি মানুষের যেকোনো ক্রান্তিকালে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন জামায়াতের আমির।

কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মু. তাহের বলেন, ভারত আমাদের প্রতি আগ্রাসী আচরণ করলে বাংলাদেশের মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবেলা করবে। সীমান্তে শহীদের মিছিল হবে। তারপরও আধিপত্যবাদী শক্তিকে মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে সৎ ও খোদাভীরু নেতা নির্বাচিত করতে হবে।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তাই এবার জামায়াতকে সুযোগ দিতে হবে। ডা. তাহের কুমিল্লা নামে বিভাগ ঘোষণা ও কুমিল্লা বিমানবন্দর সচলের দাবি জানান।

কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম বলেন, ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে বিতর্কিত করতে চায়। তিনি দেশ রক্ষায় সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। জামায়াতকে সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য কেন্দ্রীয় শুরা ও অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত ভূঞা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও টিম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শাহজাহান, কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির অধ্যাপক আবদুল মতিন, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসির আরাফাত, ড. মোবারক হোসেন, কুমিল্লা মহানগরী নায়েবে আমির মোছলেহ উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, কুমিল্লা উত্তর জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ, মহানগরী সহকারী সদস্য কামারুজ্জামান সোহেল, মহানগরী শিবির সভাপতি নোমান হোসেন নয়ন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন,নাছির আহমেদ মোল্লাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *