আবিদ হাসান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ): মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং পুলিশ ও স্থানীয় গ্রামবাসী সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন নিহতের ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে প্রধান আসামি করে ৯০ জনের নামে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও আরও আসামি করা হয়েছে পুলিশসহ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাকর্মীদের।
বুধবার সাড়ে ১১ বছর পর গোবিন্দল গ্রামের মৃত ইউসুব আলীর ছেলে মো. সহিদুল ইসলাম (৫০) বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি করেন। এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিংগাইর পৌর এলাকার গোবিন্দল নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মমতাজ বেগম ছাড়াও মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন – সিংগাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র মীর মো: শাহজাহান, উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, জেলা আ: লীগের সহ-সভাপতি হাজী আঃ মাজেদ খান, উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলাম, উপজেলা আ: লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুর রহমান শহিদ, পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবু নইম মোঃ বাশার, পৌরসভার সাবেক কমিশনার আব্দুস সালাম খান, মোঃ সমেজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রমিজ উদ্দিন , উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইন্জিনিয়ার রবিউল আলম উজ্জ্বল, উপজেলা আ: লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল বারেক খান।
এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে- মোঃ শওকত হোসেন বাদল, মোঃ রমজান আলী, মোঃ আবুল হোসেন মোল্লা, গাজী কামরুজ্জামান, দেওয়ান রিপন ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রাজুসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ বহণ করা আরও অনেকেই।
মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, বিগত ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আমার ভাই মো. নাসির ও আমি নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণে ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বে আমার নিজের জমিতে কাজ করতে যাই।
এসময় বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী ও পুলিশ টহল দিচ্ছিল। এর কিছুক্ষণ পর একদল মুসল্লি একটি মিছিল নিয়ে সিংগাইর উপজেলা সদরের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা প্রদান করে। এতে ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষের মধ্যে এক পর্যায়ে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হলে মিছিলকারীগণ এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এরই মধ্যে ওই স্থানে সরকার দলীয় সমর্থক কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় কিছু সংখ্যক লোক বিদেশী রিভলবার, চাইনিস পিস্তল, দেশীয় রামদা, ছামুরাই, চাইনিজ কুড়াল, ছেন,কিরিছসহ হাজির হয়। এরপর তারা পুলিশের ছত্র ছায়ায় পুলিশের পোষাক পরিধান করে বিভিন্ন প্রকার প্রাণনাশক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্রামের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে আমার ভাই মোঃ নাসির এবং একই এলাকার আলমগীর, নাজিমুদ্দিন মোল্লা ও শাহ আলম মারা যায় । এছাড়া মামুন, হেলেনা, লিংকন, আনোয়ার, রুবেল, ফারুক, আলমাছসহ ১০-১২ জন মুমূর্ষ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকে।
পরবর্তীতে হামলায় নিহতের ঘটনায় এজাহার দায়ের করতে থানায় গেলে মামলা গ্রহণ না করে পুলিশ জানায় এই বিষয়ে মামলা হয়েছে। যার নং- ৪৬(২)১৩, এবং দায়রা মামলা নং- ৪৫৫/২০২২ । এতে বেশি বাড়াবাড়ি করলে এই মামলাই আসামি করে চালান দিয়ে দিবো।
মামলার বাদী আরও উল্লেখ করেন, রক্ষিত ছুরতহাল ও পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের কপি অত্র মামলায় তলবে এনে ব্যবহার করা আবশ্যক। এছাড়া মামলাটি জুডিসিয়াল তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। সবশেষে আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির দাবিও করেন তিনি।