ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহ নগরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে।
প্রেমিকার বাবার অভিযোগ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানের পর বাসার সামনে থেকে ওই যুবককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে তিনি মারা যান।
ডিবি পুলিশ জানায়, পর্নোগ্রাফি আইনে ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর তারা অভিযানে গিয়েছিল। এ সময় সঙ্গে অভিযোগকারী পরিবারের সদস্যও ছিলেন। কিন্তু ওই যুবককে না পাওয়ায় তারা ফিরে আসে। পরে যুবককে আহত অবস্থায় পাওয়ার খবর পায়।
তবে যুবকের স্বজনদের অভিযোগ, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় তারা একটি মামলা করেছেন।
মারা যাওয়া ওই যুবকের নাম ফয়সাল খান ওরফে শুভ (৩০)। তিনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউস রোডে বড় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
স্বজনেরা জানান, চার বছর ধরে ফয়সালের সঙ্গে একই এলাকার এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি মেয়েটির সরকারি চাকরি হয়। এরপর অন্য আরেকজনের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হলে ফয়সালের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ফয়সাল বিয়েতে বাধা দিতে চাইলে মেয়েটির বাবা ১০ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি আইনে থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। পরে বোনের বাসার সামনে থেকে ফয়সালকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তরুণীর বাবা ঈশ্বরগঞ্জ থানা ও ডিবির কাছে পর্নোগ্রাফি আইনে অভিযোগ করেন। ১০ নভেম্বর রাতে তারা ময়মনসিংহ শহরে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযানে যান। তাদের সঙ্গে অভিযোগকারী ব্যক্তিদের দুজন ছিলেন। তখন তাকে (ফয়সালকে) সেখানে না পেয়ে তারা চলে আসেন। পরদিন আহত হওয়ার খবর পান।
তবে ফয়সালের ভগ্নিপতি মোহসিনুল হক বলেন, বাসার দোতলায় পুলিশ যখন তার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন মেয়ের পরিবারের তিনজনকেও দেখেন। তাদের মধ্যে দুজন সরাসরি পাঁচতলায় চলে যান। ফয়সাল তখন পাঁচতলায় ছিলেন। পুলিশ ওপরে উঠতে চাইলে ওপর থেকে নামতে থাকা দুজন বলেন, ফয়সাল নেই। পরে পুলিশ চলে যাওয়ার পর বাসার নিচে ফয়সালকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে তিনি দাবি করেন।
ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ফয়সালের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। রাত ১১টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এ সময় স্বজনেরা ফয়সালকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বিচার চান।
জানাজার আগে দেওয়া বক্তব্যে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটিতে আমরা মর্মাহত। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এ ঘটনায় ১২ নভেম্বর নগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় ফয়সালের বাবা মো. সেলিম খান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে ফয়সালকে বাসার নিচে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।
মামলায় মেয়েটির বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয় বলে জানান কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এ নিয়ে তদন্ত চলমান।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ওসি ওবায়দুর রহমান শনিবার বলেন, ১০ নভেম্বর মেয়েটির পরিবার থেকে অভিযোগ পেয়ে দিবাগত রাত ১২টার পর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। কিন্তু ছেলেটি ময়মনসিংহে থাকায় ডিবির কাছেও মেয়েটির পরিবার অভিযোগ দিয়েছিল। ডিবি গিয়ে খুঁজে পায়নি। কিন্তু পরদিন খবর পাওয়া যায়, বাসার নিচে পড়ে ছিল। বাসার নিচে কীভাবে পড়ল, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা আছে।