শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

মিত্রদের পাশে পাচ্ছে না ইরান

যায়যায়কাল ডেস্ক: গত সপ্তাহে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের পাশে পেলেও ইরান তার মিত্রদের পাশে পাচ্ছে না।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানের প্রথম সারির সহযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালে হিজবুল্লাহ এই সংঘাতে অংশ নেয়নি।

এছাড়া ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক ইরাকে থাকলেও বেশিরভাগ সময় তারা নীরব থেকেছে। পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরানের এক অংশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা এবং দুই বছর ধরে চলা আঞ্চলিক সংঘাতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে ইরানের মিত্ররা। তাই তারা নতুন এই সংঘাতে সরাসরি জড়াতে চাইছে না।

১৯৮০ সালের শুরুর দিকে ইরানের সহায়তায় গেরিলা বাহিনী হিসেবে হিজবুল্লাহ গঠিত হয়। যারা দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী লেবানন থেকে ইসরায়েলকে বিতাড়িত করতে সাহায্য করে।

পরবর্তী কয়েক দশকে নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয় হিজবুল্লাহ।

একসময় ধারণা করা হতো হিজবুল্লাহর কাছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ১ লাখ যোদ্ধা রয়েছে বলেও দাবি করেন গোষ্ঠীটির সাবেক নেতা হাসান নাসরাল্লাহ।

ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যকার জোট ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’-এর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে তারা।

ইরানের মিত্রদের মধ্যে রয়েছে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় মিত্র হামাসকে সহায়তা করতে হিজবুল্লাহ সীমান্ত পার হয়ে রকেট ছোঁড়া শুরু করে।
এর ফলে হিজবুল্লাহর ওপর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস হয়। নাসরাল্লাহসহ শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু হয়। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিতে মাঝে মাঝে হামলা চালিয়েছে ইরাকি মিলিশিয়ারা। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজে গুলি চালায় এবং পরে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে।

ইরানের প্রতি সমবেদনা, ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা

ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালেও সরাসরি সংঘাতে অংশ নেয়নি হিজবুল্লাহ।

হিজবুল্লাহ নেতা নাইম কাসেম ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং উচ্চপর্যায়ের ইরানি কর্মকর্তাদের নিহত হওয়ার ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন।

তবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিবে কিনা তা স্পষ্ট করেননি নাইম কাসেম।

ইরাকের আরেক মিলিশিয়া গোষ্ঠী ‘কাতাইব’ ইরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলাকে দুঃখজনক ঘটনা আখ্যা দিয়ে জানায় যে, ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করে হামলা চালানোয় বাগদাদ সরকার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ জানিয়েছে।

ইসলামিক স্টেটস (আইএস)-এর বিরুদ্ধে লড়াই করা মার্কিন সেনাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য বাগদাদ সরকারকেও আহ্বান জানায় তারা। তবে কোনো শক্তি প্রয়োগের হুমকি দেয়নি কাতাইব।

গত ডিসেম্বরে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের ফলে অস্ত্র সরবরাহের বড় পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে পড়ে।

লন্ডনের কিংস কলেজের সামরিক বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, সিরিয়ার অস্ত্র সরবরাহের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তারা কৌশলগত দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ইরানের প্রতি মিত্রদের মনোভাবে বদল

হিজবুল্লাহ সদস্যদের মতে, ইরানের বৃহত্তর আঞ্চলিক স্বার্থের জন্য তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।

ক্রিগ আরও বলেন, হিজবুল্লাহ ইরানের পরিবর্তে ‘লেবাননকেন্দ্রিক’ স্বার্থে মনোযোগ দিতে চায়।

হিজবুল্লাহ ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষক কাসেম কাসির বলেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে হিজবুল্লাহর ভূমিকা নেওয়ার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক ও মাঠের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে কিছুই অসম্ভব নয়।

সামরিক বিশ্লেষক ক্রিগ বলেন, হিজবুল্লাহর মতো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গভীর কৌশলগত হামলার করার ক্ষমতা হুতি বিদ্রোহী ও ইরাকি মিলিশিয়াদের নেই।

লন্ডনের চ্যাথাম হাউস থিঙ্ক ট্যাংকের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো রেনাদ মনসুর বলেন, ইরাকে ইরান-ঘনিষ্ঠ মিলিশিয়ারা শুরু থেকেই চেষ্টা করে আসছে যেন তাদের দেশ কোনো বড় সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে।

রেনাদ মনসুর বলেন, ইরাকে মিলিশিয়াদের পরিস্থিতি ভালো, তারা সরকারের সঙ্গে যুক্ত এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তারা দেখেছে ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে কী ঘটেছে, তাই তারা চিন্তিত যে, ইসরায়েল তাদের ওপরও আক্রমণ চালাতে পারে।

সামরিক বিশ্লেষক ক্রিগ বলেন, এতে করে হুতিরাই এখন ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’-এর সম্ভাব্য নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।

তবে তিনি জানান, ভৌগোলিকভাবে অনেক দূরে অবস্থান করা হুতিরা ইসরায়েলকে কৌশলগতভাবে ক্ষতি করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, ফলে মাঝেমধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছাড়া বেশি কিছু করার ক্ষমতাও তাদের নেই।

তিনি আরও বলেন, এটি এখন আর কার্যকর কোনো জোট নয় বরং ঢিলেঢালা নেটওয়ার্ক, যেখানে সবাই নিজের টিকে থাকার চিন্তায় ব্যস্ত।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *