বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম : শোকাবহ মিরসরাই ট্র্যাজেডির আজ ১৩ বছর। ২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা শেষে ফেরার সময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি পিকআপ বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় পাশের একটি ডোবায় উল্টে ৪২ জন স্কুলছাত্র সহ ৪৫ জন নিহত হন।
এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়লে আঁতকে উঠেন নিহতদের স্বজনরা। এখনো যাওয়া-আসার পথে দুর্ঘটনাস্থলে থমকে দাঁড়ায় পথিক। প্রতিবছরের মতো এবারো নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ১৩ বছরকে ১৩ দিনের চেয়েও কম মনে হয় সন্তান হারানো মা কোহিনুর বেগমের। তিনি ট্র্যাজেডিতে নিহত রায়হান উদ্দিনের মা। তিনি বলেন, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হয় না আমার ছেলে নেই। এইতো সেদিন রায়হান খেলা দেখতে বের হয়েছিল, সে ফিরে আসবে।’ মায়ের চাপা কান্নাকে উস্কে দিতে বছর ঘুরে আবারো বেদনা হয়ে ফিরেছে ১১ জুলাই। ১৩ বছর আগের ১১ জুলাইয়ের কথা মনে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তান হারানো মায়েরা। এ কান্নার শেষ কোথায় জানে না কেউই। সারা বছর হারানো ছেলেকে ভুলে থাকতে পারলেও নিষ্পাপ কোমলমতি সন্তানদের এ দিনে ভুলে থাকতে পারেন না কোনো মা। তার সন্তান মারা যাওয়ার ১৩ বছর পার হয়েছে শুনতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি জানান, ২০১১ সালে তার ছেলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো। সে হিসেবে এতদিনে তার ছেলের মাস্টার্সে পড়ার কথা।
প্রতিবছর ১১ জুলাই এলে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন নিহতদের পরিবার, স্বজন, স্কুলশিক্ষকরা তথা সমগ্র মিরসরাই। হারানো সন্তানদের ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে বাবা-মায়েদের কাঁদতে দেখা যায় প্রতিবছরই। কারো বা চোখের পানি ঝরতে ঝরতে এখন হয়ে গেছেন মরা পাথর। চাইলেও কাঁদতে পারেন না এখন তারা।
১১ জুলাই দিনটি মিরসরাইবাসীর কাছে অত্যান্ত বেদনাদায়ক। সারা জীবন এ দিনটিকে ভূলতে পারবেনা মিরসরাইবাসী। শুধু মিরসরাই নয়, এটি দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেরও একটি আলোচিত ঘটনায় তখন পরিণত হয়। এই জনপদের বিভীষিকাময়, বিষাদময় একটি অধ্যায়ের নাম মিরসরাই ট্র্যাজেডি। নিহতদের স্বরণে স্বজনহারাদের সান্তনা দিতে ছুটে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম এইচ এম এরশাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরীসহ দেশের বিশিষ্টজনরা।
মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে উপজেলার আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদরাসার ২ জন, প্রফেসর কামালউদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২ জন শিক্ষার্থী নিহত হন। এছাড়া এক অভিভাবক, ২জন ফুটবলপ্রেমী যুবক সহ ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রচিত হয় মিরসরাই ট্র্যাজেডি। সবচেয়ে বেশী শিক্ষার্থী নিহত হওয়া আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।
আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার জানান, মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় কুরআন খতম, সকাল দশটায় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ এবং ‘অন্তিম’ এ পুষ্পস্তবক অর্পন, সকাল ১১টায় আলোচনা সভা ও তবারুক বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে সবচেয়ে বেশী শিক্ষার্থী নিহত হওয়া আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা, জাতীয়ভাবে মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস পালন সহ বিভিন্ন প্রতিশ্রæতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।