মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

মিরসরাইয়ের পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানি সংকটে আদিবাসী বাসিন্দারা

বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬টি আদিবাসী পাড়ায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। অনেক পরিবার মাসিক হারে পানি কিনে নিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে। এতে অর্থকষ্টে পড়ছে দরিদ্র পরিবারগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় ৬টি আদিবাসী পাড়ায় তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। পাড়াগুলো হলো- মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া, করেরহাট ইউনিয়নের সাইবেনীখীল, নলখো, কয়লা, কালাপানিয়া ও খৈয়াছরা ইউনিয়নের পূর্ব মসজিদিয়া ত্রিপুরাপাড়া। এসব পাড়ায় প্রায় ১ হাজার ত্রিপুরা আদিবাসী পরিবার বসবাস করছে। কিন্তু আদিবাসী পাড়াগুলোতে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। কিছু পরিবারের কাছে নলকূপ থাকলেও অধিকাংশ আদিবাসী কুয়া ও কেনা পানি ব্যবহার করছে।
মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়ার ত্রিপুরা পাড়ার সর্দার উত্তম ত্রিপুরা জানান, তালবাড়িয়া এলাকায় দুইটি পাড়া রয়েছে। একটি রিজার্ভ পাড়া ও অন্যটি চৌধুরী পাড়া। এই দুই পাড়ায় প্রায় ১৪০টি পরিবার রয়েছে। যাদের পানির জোগান দেয় কুয়া। কিন্তু শীত মৌসুমে কুয়ার পানি শুকিয়ে যায়। আর বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে কুয়াগুলো পানিতে তলিয়ে যায়।
জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে ওই পাড়ায় উপজেলা পানি ব্যবস্থাপনা ফোরামের সভাপতি ডা. জামশেদ আলমের উদ্যোগে ১৩টি কুয়া স্থাপন করা হয়। কিন্তু ১৩টি কুয়ার মধ্যে এখন পানি আছে মাত্র ৪টিতে। পরে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে একটি রিং টিউবয়েল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ওই পাড়ায় তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের পূর্ব মসজিদিয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পাড়ার বাসিন্দা ধনবীর ত্রিপুরা বলেন, আমাদের পাড়ায় প্রায় ৭০টি পরিবার রয়েছে। এদের সবাই ছড়ার পানি ব্যবহার করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় ছড়াটি।
ওই পাড়ার সর্দার সুমন ত্রিপুরা বলেন, পাড়ার সবাই কুয়া ও ছড়ার পানির ওপর নির্ভরশীল। কয়েক বছর আগে একটি টিউবয়েল পেলেও সেটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
অন্যদিকে করেরহাট ইউনিয়নের সাইবেনীখীল পাড়ায় ১০০টি আদিবাসী পরিবারে প্রায় ৫ শতাধিক লোকজন বসবাস করে। ওই পাড়ায় প্রায় ৩৫ জনের কাছে টিউবয়েল থাকলেও বাকিদের কাছে নেই। তাই তারা যাদের কাছে টিউবয়েল রয়েছে তাদের কাছ থেকে মাসিক ৫০-১০০ টাকায় বিশুদ্ধ পানি কিনে নেয় বলে জানান পাড়ার বাসিন্দা ঊষা ত্রিপুরা।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬টি আদিবাসী পাড়ায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়
এছাড়া ওই ইউনিয়নের নলখো পাড়ায় ১১০টি আদিবাসী পরিবার রয়েছে। পরিবারগুলোতে প্রায় ৭০০ মানুষ বসবাস করে। নলখো পাড়ায় প্রায় ৪৫-৫০টি পরিবারের মধ্যে নলকূপ রয়েছে।
আরও জানা গেছে, অনেক আদিবাসী পরিবার পাহাড়ি ছড়া থেকে পাত্রে পানি সংগ্রহ করে রাখে। পরে ওই পানি ব্যবহার ও খেয়ে থাকে। তাই অনেক সময় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় তারা।
 উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ জানান, আদিবাসী পাড়াগুলো পাহাড়ে হওয়ায় গভীর নলকূপ দেওয়া যায় না। তাই রিং টিউবওয়েলের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পানির সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে। নতুন কিছু রিং টিউবয়েল স্থাপন করা হবে।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ