বুধবার, ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘রক্তযোদ্ধা’ মিজানের না বলা গল্প

কর্ণফুলী প্রতিনিধি:
বছরের পর বছর স্বেচ্ছায় মুমূর্ষু রোগীদের নিয়মিত রক্ত দান করে মানবতার সেবায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কর্ণফুলী মিজানুর রহমান । এ পর্যন্ত প্রায় ১  হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়ে মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার কাজে এগিয়ে এসেছেন। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। এলাকার বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ কর্ণফুলী ব্লাড ডোনার সোসাইটি চট্টগ্রাম  নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলার মানুষ বিনামূল্যে রক্ত পাচ্ছেন এখান থেকে।
একজন ‘রক্তযোদ্ধা’ মিজানের না বলা গল্প
মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান একজন রক্তযোদ্ধা। নিয়মিত রক্তদাতা। রক্ত প্রয়োজন, এমন কথা শুনলে সে অস্থির হয়ে যায় রক্ত জোগাড় করে দিতে। পরিবারের খুব পরিশ্রমী ছেলে। বাবা মারা যাওয়ায় এবং মা  কাছেই মানুষ।  বিভিন্নভাবে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছেন। মিষ্টভাষী ও ভদ্র। নিজ এলাকায় তাকে সবাই খুব পছন্দ করে। অন্যকে সাহায্য করতে কখনো দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না এ মিজানুর রহমান ।
মানুষের রক্ত লাল। এ লাল ভালোবাসা বিলিয়ে শান্তি পান মিজান।
চট্টগ্রাম  শহরের কর্ণফুলী উপজেলা শিকলবাহা ৯নম্বর ওয়ার্ড চরহাজারী সড়কের মৃত নরুল ইসলাম ছেলে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান । পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনও পরিচালনা করেন মিজান। কর্ণফুলী ফয়জুল বারী ফায়িল ( ডিগ্রী) মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে। একই সঙ্গে ‘স্বপ্ন প্রয়াস কর্ণফুলী ব্লাড ডোনার সোসাইটি চট্টগ্রাম  নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
কারো রক্তের প্রয়োজন পড়লে মিজান  তা সংগ্রহ করে দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি নিয়মিত একটি ডায়েরি সংরক্ষণ করেন। তার অধীনে শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ রয়েছে তার সংগঠনে। সেখানে নিকটাত্মীয়-স্বজন, বন্ধু এমনকি পরিচিতজনদের রক্তের গ্রুপ মোবাইল নম্বরসহ অসংখ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে। কারও রক্ত লাগলে মিজান সঙ্গে মোবাইলে অথবা সরাসরি যোগাযোগ করেন। মিজান তাৎক্ষণিক ওই ব্যক্তিকে কোনো টাকা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে দেন।
মিজানুর রহমান  জানান, মানুষ যখন খুব বিপদে পড়ে তখন অন্য কারো শরণাপন্ন হয়। বিশেষ করে যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন মানুষ দিশাহারা হয়ে ওঠে। কোথায় পাবে, কীভাবে পাবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে রক্ত পাওয়া যাবে? সেই চিন্তা যেন তখন আকাশ সমান হয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয় তখন, যখন কারও বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি। রক্তের পোস্ট বা মেসেজ পেলেই সাধ্যমতো চেষ্টা করি রক্ত জোগাড় করে দিতে। যখন রক্ত জোগাড় করে দিই তখন রক্ত গ্রহীতা ও তার আত্মীয়-স্বজনের হাসিমুখ দেখতে পাই। তখনকার অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। রক্ত জোগাড় করে দিলে মনে প্রশান্তি কাজ করে। কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারার আনন্দ আসলেই অন্যরকম।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ৪ বছর ধরে অসুস্থ মানুষকে রক্ত সংগ্রহ করে দেয়ার এ কাজটি করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১:হাজার মানুষকে কোনো টাকা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছি। আমি নিজেই ০৪ বার রক্ত দিয়েছি। কোনো ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন জানালে বন্ধু, পরিচিতজন, নিকটাত্মীয়দের কাছে রক্তদানের জন্য অনুরোধে করি। সে ব্যক্তি সম্মত হলে অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্তদান করা হয়।
এলাকার মানুষ জানায, মিজান দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে বিনা টাকায় রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেন। তার এ কাজে আমরাও সহযোগিতার চেষ্টা করি।
, রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মিজানুর রহমান  অনেক মানুষকে রক্ত সংগ্রহ করে দেন। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হয়।
 আমরা অনেক সময় দেখি হাসপাতালে অনেক মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়। ওই সময় মিজানুর রহমান কে জানানো মাত্র বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে রক্ত সংগ্রহ করে দেয়। এটি খুবই ভালো কাজ। মিজানেরএই কাজ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এছাড়া মিজান তার সংগঠনের সাহায্যে অনেককে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দিয়েছেন।
মিজাব  নিয়মিত চার মাস পরপর রক্ত দান করেন। স্বপ্ন দেখেন সুন্দর আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার; আর রক্তের কোন‌ অভাব থাকবে না বাংলাদেশে। সবাই রক্তদানে উৎসাহিত হবেন।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ