
জিয়াউল হক (খোকন), নিজেস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু লালনের আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে সেদিন সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তুলতে বলেছিলেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তিনিই একমাত্র বাউল সাধক যিনি সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। আজকের যুগে তাঁর এই আহবান একেবারেই বাঙালী জাতির জন্য সমকালিন।
শনিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ৩ দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি এসব কথা বলেন। মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আজকের সমাজে চরম নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক ধর্মকে হাতিয়ার বানাতে চাই। তারা ধর্ম ব্যবহার করে সাম্প্রাদায়িকতার বিষ সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে কিভাবে এদেশে ধ্বংশযজ্ঞ চালিয়েছে কিংবা চালাচ্ছে বাংলার মানুষ তা দেখে হতবাক হয়েছে। ধর্মের নামে সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর নৃশংস বরবর্তা ও হানাহানি করে জাতিকে বিভক্তি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যা কোন সভ্য সমাজের কাম্য নয়। তাই লালন সাঁইজির গানের দর্শন ও বানী সমাজের বিভিন্নস্থরে ছড়িয়ে দিতে হবে। লালনের আদর্শের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষায় দিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, সক্রেটিস সহ বিশে^র প্রখ্যাত সব দার্শনিকদের মতবাদের সাথে লালনের গানের ভাবাদর্শের মিল রয়েছে অনেক খানি। সবাই তাঁদের চিন্তা দিয়ে মানুষের প্রতি মানৃুষের ভালাবাসার কথা বলেছেন। বলেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা। অনুষ্ঠানে আগত ফকির লালন সাঁইয়ের ভক্ত-অনুরাগীদের বাউল ও সাধকরা মানবতা মতাদর্শের মানুষ” সহজ সরল॥
তাঁরা কোন অসম্প্রদায়িক মানুষ নয়, তাদের নিরাপত্তা ও আসা-যাওয়া কিছুটা হলেও শিথিল করতে হবে। তবেই তো জম বাউলের হাট। হানিফ আরো বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি দেশের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে লালনের ভাবাদর্শ নিয়ে তেমন একটা চর্চা দেখা যায়না। ফকির লালন এর চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সমাজের সকল প্রকার হানাহানি কাটাকাটি দুর করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন লালন সাঁই । তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু লালনের আর্দশে অনুপ্রাণীত হয়ে সেদিন সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তুলতে বলেছিলেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আজকের যুগে তাঁর এই আহবান একেবারেই বাঙালী জাতির জন্য সমকালিন। তাই আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লালনের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি॥
অনুষ্ঠানের শুরুতে এবং আলোচনার শেষে আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেষ্ট ও আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন॥
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া ৪ (খোকসা-কুমারখালি) আসনের এমপি ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া ১ দৌলতপুর আসনের আসনের এমপি আঃ কাঃ মঃ সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন খান, কুষ্টিয়া জজকোর্টের বিজ্ঞ পিপি এ্যাড.অনুপ কুমার নন্দী, নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়ার আহবায়ক ডাঃ এস.এম. মুস্তানজিদ ও কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি’র সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ॥
প্রধান আলোচক হিসেবে লালন সাঁইয়ের জীবন, দর্শন ও সৃষ্টি গানের মর্মকথা নিয়ে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক উপ উপাচার্য্য ড.মোঃ শাহিনুর রহমান।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আখতার ও কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল, স্বাগত বক্তব্য রাখেন এ্যাড.শহিদুল ইসলাম।
আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীতি পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন উপহমাদেশের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী শাহানাজ বেলি, সমীর বাউল, সুপিয়া কাঙ্গালিনী সহ দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। ৩ দিনব্যাপী স্মরণোৎসব দিবসের অনুষ্ঠানমালার উপস্থাপনা করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের এনডিসি ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট শাহেদ আরমান, কাজী শারমিন আখতার , ফারহানা আখতার, কনক চৌধুরী॥