রবিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

সব আমলেই ত্রাসের সৃষ্টি করছেন মুসা মন্ডল, তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দৌলতদিয়া ঘাটের ত্রাস মুসা মন্ডলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সব আমলেই ত্রাসের সৃষ্টি করছেন এই মুসা মন্ডল।

তার কাছ থেকে রেহায় পাচ্ছে না নিরীহ মানুষও। তার নেতৃত্বে ঘাট এলাকায় চাঁদাবাজি ও লুটপাটের ঘটনা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে স্থানীয়দের।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দৌলতদিয়া ঘাটে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তার বাহিনী। একইভাবে বর্তমান সরকারের আমলেও অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে এই মুসা মন্ডল। তার বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ও আদালতে চুঁরি, চাঁদাবাজি, হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ ও একই সাথে বিভিন্ন মাদকের একাাধিক মামলা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে খোলস পাল্টিয়ে এখন মুসা মন্ডল বিএনপি নেতা সেজে পূণরায় দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। এবং ঘাট এলাকায় করছেন মাদক ব্যবসা। তার নেতৃত্বে গড়ে তুলেছে সংঙ্ঘবদ্ধ বাহিনী। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ডাকাতি, চুরি, চাঁদাবাজি, অন্যের জমি দখল ও ঘাট এলাকায় জবরদখল করে যাচ্ছে।
মুসা মন্ডল বিএনপির কোন নেতা না হওয়ার পরও নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মুসা মন্ডলের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছেনা স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও। দৌলতদিয়া ইউনিয়নে তার আধিপত্য ধরে রাখতে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথেও করছেন প্রতিনিয়ত খারাপ আচরণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। মুসা মন্ডল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডাকাতি ও লুটপাট করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতা সেজেছে। অথচ সে বিএনপির কোন কমিটিতে নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নানা ভাবে হয়রানি করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্রদল নেতা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে মুসা মন্ডল ও তার বাহিনী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছে। তার বাহিনীর হাতে এলাকার সাধারণ মৎস্যচাষী ও নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছে। তার অপকর্ম থেকে বাঁচতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

এছাড়াও দেশের সর্ববৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা ধরণের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এই মুসা মন্ডল। তার অপকর্ম ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পল্লীর বাসিন্দারা। এবং মানুষকে মারধর, অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, উন্নয়ন কাজে বাঁধা প্রদান ও ভয় দেখানোসহ নানান অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় গ্রামের গন্যমান্য ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত এর বিচার চাই এবং মুসা মন্ডল কে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।

স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার পরও মুসা মন্ডল কীভাবে এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। তার খুঁটির জোর কোথায়? এলাকাবাসী অবিলম্বে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মুসা মন্ডল কে গ্রেপ্তার করে এলাকার যুব সমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশানের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এলাকাবাসী, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর-সবাই জানে, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় মাদকের মূল ব্যবসায়ী কে বা কারা। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে।কিন্তু মাদক ব্যবসায়ী মুসা মন্ডল আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, মুসা মন্ডলের বিরুদ্ধে মাদকের বিভিন্ন ধরণের মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইয়াবা, গাঁজা ও বিভিন্ন মাদক এলাকায় আনেন। বিক্রি করেন তাঁর সহায়তাকারীরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তথ্য থাকলেও কৌশল ও জনবলের দিক দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না তাঁরা।

আর পুলিশ বলছে, মাদকের এই হোতাদের ধরতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, এই মাদক ব্যবসায়ী মুসা মন্ডলের সঙ্গে তাঁদেরই কোনো কোনো কর্মচারী ও সোর্সদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। এরা প্রশাসনের গতিবিধি আগাম জানিয়ে দেয়। কিন্তু এদের চিহ্নিত করতে পারছেন না তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদক ব্যবসায়ী আর স্থানীয় ও বহিরাগত ক্রেতাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যবসায়ীরা চিহ্নিত হওয়ার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না। প্রশাসন সবকিছু জানলেও এলাকায় কীভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে?

বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে গোপনে বিক্রি হলেও এখন প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে, দৌলতদিয়া ঘাটের আনাচে কানাচে ও বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি এসব জায়গায় মাদক কিনতে আসেন বহিরাগতরাও।
এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মুসা মন্ডলের মাদকের রমরমা ব্যবসার কারণে এলাকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট সহ উঠতি বয়সের যুবকেরা বিপথগামী হচ্ছে। একই সাথে মাদকখোরদের অবাদ চলাচলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকার শান্তি কামি মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দাপটের নেতা ছিলেন তৎকালীন গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মন্ডল ও গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক মেয়র, নজরুল ইসলাম মন্ডল। আর এই নুরু মন্ডল ও নজরুল মন্ডলের চাচাতো ভাই মুসা মন্ডল। আওয়ামী লীগ নেতা এই দুই ভাইয়ের দাপটেই দৌলতদিয়া ঘাটে আতংকের সৃষ্টি করেন এই মুসা মন্ডল।

বিগত সরকারের সময়ে মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম করেছেন এই মুসা মন্ডল। বর্তমানে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহন মন্ডলের আপন ভাই হওয়ার কারণে পুনরায় মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে জানা গেছে, মুসা মন্ডল কখনো বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। হঠাৎ করেই ৫ ই আগস্টের পর বিএনপির নাম ব্যবহার করে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।
সরেজমিন ঘুরে আরো জানা যায়, মুসা মন্ডলের নেতৃত্বে দৌলতদিয়া বাজারের মধ্যে অবস্থিত একাধিক বোডিংয়ে অবৈধ দেহ ব্যবসা করছেন খারাপ নারীরা। এই দৌলতদিয়া বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি মুসা মন্ডলের আপন ভাই মোহন মন্ডল। সে কারণেই ধরা ছোয়ার বাইরে থেকেই প্রতিদিনই অবৈধ উপায়ে দেহ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এবং বোডিং মালিকদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে এই মুসা মন্ডলের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও পুরাভিটা এলাকায় একাধিক বাড়ীতে দিনে ও রাতে দেহব্যবসা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। সেখান থেকেও মুসা মন্ডলের নামের ওপর বখরা দিতে হয়। মুসা মন্ডল কে ম্যানেজ না করলে সেইসব নারীদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন।

এবং ফেরীতে তিন তাস নামক জুয়ার যে আসর বসে সেখান থেকেও দিতে হয় তার বখরা। এই জুয়া খেলার টিম প্রধান জামাল, ফেরীতে জুয়া খেলার আগে অনুমতি নেয় মুসা মন্ডলের এবং জুয়া খেলার শেষে প্রথমেই তার ভাগা দিয়ে অন্যান্যদের মাঝে টাকা বন্টন করা হয় বলেও জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জুয়ারিরা।

অন্যদিকে পদ্মা নদীতে মাছ ধরার জন্য একাধিক জেলের নৌকা থাকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায়। সেই নৌকা প্রতিও টাকা দিতে হয় এই মুসা মন্ডল কে। টাকা না দিলে অন্য জেলা থেকে আসা জেলেরা দৌলতদিয়া অংশের পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে পারে না বলেও জানিয়েছেন একাধিক মৎস্যজীবিরা।

তার এই অপকর্মের কথা দৌলতদিয়া তথা গোয়ালন্দ উপজেলা বাসী সবাই জানে। অপকর্মের ফাঁদে ফেলে করেছেন একাধিক নারীকে বিয়ে।

এছাড়াও দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর এক সময়ের প্রভাবশালী সর্দারনী যৌনকর্মী কল্পনা বাড়িয়ালী কে বিয়ে করেন এই মুসা মন্ডল। সে ঘরেও তাদের ছেলে সন্তান রয়েছে। তার ছেলের নাম কনক মন্ডল। কনক মন্ডল, গোয়ালন্দ ৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। মুসা মন্ডলের যৌনপল্লীতে রয়েছে বাড়ী।

সেই যৌনপল্লীর বাড়ীটি পরিচালনা করেন তারই ছেলে যুবলীগ নেতা কনক মন্ডল। যৌনপল্লীর ভিতরে ও পুরাভিটায় যারা মাদক ব্যবসা করেন তাদের প্রত্যেককেই পেমেন্ট বা চাঁদা দিয়ে তাদের ব্যবসা করতে হয়। এবং এই মাদকের সর্গরাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন মুসা মন্ডল, এমন অভিযোগ করেছেন অনেকে।

তবে এতো অপকর্ম করার পরও ধরা ছোয়ার বাইরে থাকেন মুসা মন্ডল। এলাকাবাসী তার অপকর্ম আর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মুসা মন্ডলের বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এবং তার ব্যক্তিগত মুঠো ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ