মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সলঙ্গায় মাছবাহী ট্রাকে পানি ভরাট নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি ও মহাসড়ক

কাইয়ুম মাহমুদ, সিরাজগঞ্জ:  ​সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের সি আর বিসি নামক এলাকার হোটেল গুলোতে চলছে অবাধে মাছবাহী ট্রাকে পানি ভরাটের কাজ।
মাছবাহী ট্রাকের পানি পড়ে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কগুলো। প্রতি বছর এসব সড়ক সংস্কারে সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।
সড়ক  ও জনপথ বিভাগ থেকে এই অবৈধ ট্রাক চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও দীর্ঘদিনেও এর কার্য্যকারিতা হয়নি। এতে প্রতিনিয়ত মহাসড়কে দুর্ঘটনা জনিত যানবাহন চলাচলের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
নাটোর বনপাড়া মহাসড়কের মহিষলুটি থেকে শুরু করে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত  যে সব ট্রাকের হোটেল গুলো মহাসড়কের পাশে অবস্থানরত আছে তাতে ট্রাকে পানি ভরাট করে তারা।  তাদের মধ্য নুরজাহান হোটেলটি অন্যতম। যে খানে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় মাছের ট্রাকে পানি ভরাট করা।
নুর জাহান হোটেলের মালিক নুরু মাষ্টার  এক সময়  হাটিকুমরুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম আলম রেজার সহযোগীতা নিয়ে ও মোহাম্মাদ হোটেলের মালিক মোহাম্মদ আলি  হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ছাত্র লীগের সভাপতি সায়েম এর সাথে আতায়াত করে তার শক্তি বল ব্যাবহার করে । নুরু মাষ্টার ও মোহাম্মদ  তার নিজস্ব গুন্ডা বাহিনী দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই অবৈধ পানির পয়েন্ট চালিয়ে আসছিলেন ।
 এখন তারা  আগস্টের পর থেকে নতুন ভাবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বি এন পির কিছু নেতাদের সাথে আতায়াত  করে এই পানির পয়েন্ট চালাচ্ছে।
মাছবাহী ট্রাকের পানি পড়ে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের সড়ক। আর এই মহাসড়কটি প্রতি বছর সংস্কার করার কারনে সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।
রাজশাহী, নাটোর -পাবনা, বগুড়া, নলকা, এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত ছোট-বড় মাছবাহী ট্রাকে মাছ পরিবহণ করা হয়। এসব মাছ তাজা রাখতে প্রচুর বরফ ও লবন পানি ব্যবহার করা হয়।
তাই নুরু মাষ্টার ও মোহাম্মদ তার ক্ষমতার অপ ব্যাবহার করে দিন মুজুর দিয়ে প্রতিনিয়তই অবৈধ ভাবে মাছের ট্রাকে পানি বিক্রি করছেন। প্রতিটি মাছের ট্রাকে পনি পরিবর্তন করে নতুন পানি ট্রাকে ভরাট করে চালকদের কাছ থেকে  হাতিয়ে নিয়েছে। ২০০থেকে ৩০০টাকা, আর ছোট পিকাপ চালকও মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১০০থেকে ১৫০টাকা।
এসব মাছ ভর্তি ট্রাকগুলোয় নিচের অংশ দিয়ে প্রতিদিন পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ে সরাসরি রাস্তায় জমাট হতে থাকে। এতে করে রাস্তার বিটুমিন গলে গিয়ে পিচ দুর্বল হয়ে যায়। খোলা এই ট্রাকগুলো দ্রুত গতিতে চলার সময় পুরো মহাসড়কে গুঁড়ি গুঁড়ি  পানি পরতে থাকে ।
পানি ভর্তী ট্রাক গুলো  মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করায় পুরো সড়ক ভঙ্গুর হয়ে যায়। এসব কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনাসহ যানবাহন চলাচলের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে ছোট বড় গর্থ   সৃষ্টি হয়  ফলে যানবহনের চলাচলের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয় । এমনকি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
এভাবে ট্রাকে পানি ভর্তি করে মাছ পরিবহণ করার নিয়ম না থাকলেও, সরেজমিনে জেলার মহিষলুটি থেকে শুরু করে মহাসড়কে পাশে অবস্থিত,  তালতলা আলামিন হোটেল, রামারচর হোটেল, সোহাগ ভাই হোটেল,  মোহাম্মদ এর হোটেল, ফরিদুলের হোটেল,সিল্ক সিটির অপজিটে বিসমিল্লাহ হোটেল,নুরজাহান হোটেল, আল্লাহর দান হোটেল, চলে পানি ভরাটের কাজ।
​নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাক চালক বলেন, আমরা নাটোর বগুড়া থেকে শুরু করে  ঢাকা পর্যন্ত মাছ পরিবহন করি। ঝাকি বা ধক্কলে  ট্রাকের পানি পড়ে যায় এবং মহাসড়কে ক্ষতি হয়ে অনেক স্থানে ক্ষতি হয়।এ কারনে নাটোর পনপাড়া থেকে  হাটিকুমরুল  মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি খানা খন্ড সৃষ্টি হয়ে রাস্তাটা খারাপ হয়ে গেছে বেশ কয়েকবার।
অনেক সময় পিচ গলে গিয়ে গাড়ি গুলো আটকে যায়। এসব গাড়িগুলো সাধারণত এই সব রাস্তায় বেশি চলে। আমরা সিনিয়রদের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু তাদের কোনো সহযোগিতা পায়নি।
চড়িয়া এলাকার শতাধিক কৃষকের প্রায় ৬০০ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে,  জমি গুলো সব হোটেল গুলোর পেছন দিকে রয়েছে ,  ট্রাকের সকল আনলোড করা। বরফ ও লবন যুক্ত লোনা পানি  কৃষি জমিগুলোতে প্রবেশ করার কারনে কানায় কানায় ভরপুর হয়ে থাকে জমি গুলো। কৃষকের প্রায় ৬০০বিঘা জমিতে ধান লাগানোর অনউপযোগী হয়ে পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকে এই সব কৃষি জমি পরে থাকা কৃষকেরা প্রচুর ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে ।
এবিষয়ে এলাকার কৃষকরা উপজেলা কৃষি অফিসে একাধিকবার অভিযোগ করলেও অদৃশ্য কারনেই এই অবৈধ পানির পয়েন্ট গুলো বন্ধ হয় না।
​সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইমরান হোসাইন জানান, মাছবাহী ট্রাক গুলতে লবন যুক্ত পানি থাকে। যে পানি গুলো আনলোড করে নতুন ভাবে পানি ভরাট করে চালকরা।
ট্রাকে পানি দিয়ে মাছ পরিবহন করায় উত্তরাঞ্চলের প্রধান মহাসড়ক  প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। ট্রাকের পানি পরে মহাসড়কের ভিটামিন গলো নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে মহাসড়ক খানা খন্ডে পরিনত হয়। তিনি আরও বলেন, এই ট্রাকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং আগামী দিনে এ বিষয়ে ব্যবস্থা চলমান থাকবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, এর আগে অভিযোগ পেয়ে ছিলাম এবং ভ্রামনমান আদালত পরিচালনা কারা হয়েছিল। যদি আবারও মাছবাহী ট্রাকে পানি ভরাটের কাজ চলমান থাকে তবে অতি দূরত্বই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।কৃষক যেনো মাঠে ধান চাষ করতে পারে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে ।
 উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু -সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, অতিদ্রুত এই পানির পয়েন্ট গুলো বন্ধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যাতে করে কৃষক তার কৃষি জমিতে ধান লাগাতে পারে। আর এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে ।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ