
রহিদুর রহমান মিলন, সারিয়াকান্দি (বগুড়া): বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে জিয়া মন্ডল নামে এক ব্যক্তি নিজ ঝুপড়ি ঘরে মরা গরু রেখে আগুন দিয়েছে।
ঘটনাটি উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের শংকরপুর চর এলার মৃত বাদশা মন্ডলের ছেলে জিয়া মন্ডলের বাড়িতে ঘটে। জাহেরুল মন্ডল গংদের ফাঁসাতে জিয়া মন্ডল থানায় একটি অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের শংকরপুর ৩নং ওয়ার্ডের সাত্তার আকন্দের ছেলে সামিউলের একটি গাভী মারা গেলে তাদের জমির পাশের একটি ডোবার উপরে ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে ফেলে দিয়ে যান। পরের দিন তারা জমিতে কাজ করতে আসলে মরা গরুটির আর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাননি। পরে বিষয়টি স্থানীয় গ্রামবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
অপরদিকে গত ৩ অক্টোবর রাতে জিয়া মন্ডলের সদ্য তোলা একটি ঝুপড়ি ঘরে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ে।সেখানে স্থানীয়রা যাওয়ার পর একটি গাভীসহ একটি ঝুপড়ি ঘর পোড়া দেখতে পান। এলাকাবাসী আগুনে পোড়া গাভীটির শিং এবং সামিউলের মৃত গাভীর শিং একই রকম হওয়ায় নানা রকম আলোচনা-সমলোচনা করতে থাকেন।
এলাকাবাসীর ধারণা, জিয়া মন্ডল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রাতের অন্ধকারে মরা গাভী নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে কয়েকটি টিন দিয়ে একটি ছাপড়া ঘর তুলে আগুন লাগান।
এলাকাবাসী আরো জানান, জিয়া মন্ডল বোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের ৪নং ওয়ার্ডের সভাপতি।আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এলাকা এাসের রাজত্ব কায়েম করে ছিল। জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মে তিনি লিপ্ত ছিলেন। সেসময় কারো সাহস ছিল না তার বিরুদ্ধে কথা বলার।
এ ব্যাপারে মৃত গরুর মালিক বলেন, গরুটি মারা গেলে আমার বড় ও ছোট ভাইদের সহযোগিতায় ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে আমাদের জমির পাশে ডোবার উপরে ফেলে দেয়। পরের দিন জমিতে গিয়ে দেখি ফেলে দেয়ার স্থানের গরুটির কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত গরুটি কে বা কারা গরুটি নিয়ে যায় । সেখানে ঘোড়া গাড়ির চাকার চিহ্ন পাওয়া যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সংকরপুর গ্রামের সামিউলের একটি গরু মারা যায়। মৃত গরুটিকে তার জমির পাশে ডোবার উপরে ফেলে আসে। পরের দিন মৃত গরুটাকে ফেলে রাখার স্থানে পাওয়া যায়নি। অপর দিকে সংকরপুর গ্রামের জিয়া মন্ডলের বাড়িতে গাভীর রাতে ছাপড়া ঘরে অগ্নিকাণ্ডে একটি গাভি মারা যায়। ঘরের খুঁটিগুলো নতুন করে পোঁতা হয়েছিল। খুঁটির গোড়ায় ঝরঝরে মাটি পাওয়া যায়। ঝুপড়ি ঘরের কোনার মেঝেতে ঘাস পাওয়া যায়। মেঝের কোন অংশে গরুর গোবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় মোবারক প্রামাণিক বলেন, জমিজমা সংক্রান্তির বিরোধীর জেরে আগের মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে এবং আমাদের ফাঁসানোর জন্য অন্যের ফেলে দেয়া মরা গরু জিয়া মন্ডল রাতের অন্ধকারে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে কয়েকটি টিন ও বাঁশ দিয়ে ছাপড়া ঘর তৈরি করে তার মধ্যে মরা গরু রেখে আগুন লাগায়। ঘটনাটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যস্ততা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপারে জিয়া মন্ডলের স্ত্রী আরজিনা বলেন, জাগনা পেয়ে দেখি আগুন জলতিছে গরু বাছুর ছুটে গেছে । ৪টি গরু ছুটে গেলেও পরে দেখি একটা গাভী পুড়ে মারা গেছে।
মরা গরু নিয়ে এসে আগুন লাগার কথা বললে তিনি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের সাথে আর কথা বলতে চাই না। আমার গরু মারা গেছে তা আমি বুঝবো।
জিয়া মন্ডলের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজন হলে প্রশাসন মরা গরু তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করবে। বেটা হচ্ছে জেলখানায়। আমি হয়েছিল দুর্বল।
এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দি থানা অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার স্থলে একজন অফিসারকে পাঠিয়েছিলাম। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।