সোমবার, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিলেটের মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করা হয়, গ্রেপ্তার ৪

সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের কানাইঘাট থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু মুনতাহা আক্তারকে (৫) অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ডোবায় পুঁতে রাখা হয়েছিল।

নিখোঁজের ছয় দিন পর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। পরে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে ডোবা থেকে লাশ তুলে পুকুরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ এসব তথ্য জানিয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

তারা হলেন মুনতাহার প্রতিবেশী কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের মার্জিয়া আক্তার, তার মা আলিফজান বেগম, প্রতিবেশী নাজমা বেগম ও ইসলাম উদ্দিন। আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের নাম–পরিচয় জানায়নি পুলিশ।

নিহত মুনতাহা কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।

পুলিশ বলছে, এর আগে মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ গত শনিবার কানাইঘাট থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ মামলা করেছিলেন। আটক ব্যক্তিদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলা দায়েরের পর শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুনতাহার প্রতিবেশী মার্জিয়া আক্তারকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। মুনতাহাকে প্রাইভেট পড়াতেন মার্জিয়া। তবে সম্প্রতি মুনতাহার বাবা মার্জিয়ার কাছে মেয়েকে পড়াতে পাঠাননি। মার্জিয়াকে আটকের পরই মুনতাহা নিখোঁজের ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। রোববার ভোররাতে মার্জিয়া আক্তারের মা ডোবা থেকে শিশু মুনতাহার লাশ নিয়ে পুকুরে ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন।

শিশু মুনতাহার নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা চলছিল। শিশুটি উদ্ধারে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পরিবার। এর মধ্যে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ নভেম্বর থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল।

রোববার দুপুরে শিশু মুনতাহার মরদেহ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মুনতাহার চাচা কয়ছর আহমদ বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে তারা সবাই প্রতিবেশী। মুনতাহার বাবা আগে সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। তার পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। মুনতাহা তার পঞ্চম সন্তান। কারও সঙ্গে তার ভাইয়ের বিরোধ নেই। তবে মার্জিয়ার কাছে প্রাইভেট পড়াতে না দেওয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে তার ধারণা।

সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা বলেন, নিহত শিশু মুনতাহার বাবার দায়ের করা অপহরণ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন।

পুলিশ বলছে, লাশ উদ্ধারের সময় শিশু মুনতাহার শরীরে কাদা লেগে ছিল। গলায় রশিজাতীয় কিছু পেঁচানো ছিল। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল মুনতাহা। কিন্তু বিকেল হলেও বাড়িতে না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে মুনতাহার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। শিশুটি নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিতভাবে তাকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *