
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দিদারুল আলম নামে জাতীয় পার্টির এক নেতার জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান নিয়ে ফেইসবুক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা মডেল মসজিদে উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত সাবেক সাথী ও সদস্য সমাবেশে তিনি জামায়াতে যোগদান করেন। এসময় উপস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলাম তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এসময় সমাবেশে জেলা ও উপজেলা নেতারা করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।
দিদারুল আলম চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক। এদিকে জেলা পর্যায়ের এই নেতার জামায়াতে যোগ দেওয়াকে ঘিরে সীতাকুণ্ড উপজেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জামায়াতের অনেকেই তাদের ফেসবুকে লিখেছেন, স্বৈরাচারের ভ্যানগার্ড জাতীয় পার্টি বিগত দিনগুলিতে বিএনপি ও জামায়াতের সাথে গাদ্দারি করে সবকটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সীতাকুণ্ডে ও জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই জাতীয় পার্টি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে তাদের সকল অপকর্মের অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে।
শুধু তাই নয় দিদারের আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ভেসে এলো ৷ এসব পোষ্টে অধিকাংশ মন্তব্যে জামায়াতকে ধুয়ে দিচ্ছে নেটিজেনরা। তাদের মতে, জাতীয় পার্টি জামায়াতে যোগ দেওয়া আর আওয়ামী লীগ যোগ দেওয়া একই কথা। অনেকে জামায়াতকে সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা মামুনকেও দলে ভেড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
মো. ফয়েজ নামে শিবিরের একজন কর্মী আর ফেসবুক আইডি থেকে লিখেছেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টকে পুনর্বাসনে অন্যান্যদের মতো জামায়াতও পিছিয়ে নেই।
মোহাম্মদ সুমন নামে একজন লিখেছেন, দিদার আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর৷ থানার দালাল হিসেবে তাকে সবাই চেনে৷ তার ছেলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা।
অপরদিকে কারা তাকে জামায়াতে ঢুকিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করতে দাবি তুলেছেন জামায়াতেরই একটি পক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, সীতাকুণ্ড আলিয়া কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন দিদারুল আলম। মাদ্রাসার সাথে সিকিউর সিটির বেশ কিছু দোকান নিয়ে বিরোধ চলমান৷ মাদ্রাসাকে ঠকিয়ে সম্মুখ সারির অধিকাংশ দোকান হাতিয়ে নেয় শপিং কমপ্লেক্সটি৷ এসব স্বার্থ চুকিয়ে দিতে কাউকে পাচ্ছিল না সিকিউর সিটি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দিদারুল আলমকে জাতীয় পার্টি থেকে জামায়াতে যোগদান করানোর পেছনে জামায়াতের শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা জড়িত। তার কষা ছকেই আওয়ামী দোসর দিদারুল জামায়াতের রাজনীতিতে আবির্ভূত হন৷ ১৭ বছর বিএনপি জামায়াতের কর্মীদের রক্ত চুষে খেলেও গতকাল থেকে তিনি ইসলামের সুমহান বুলি আওড়াচ্ছেন।
একইভাবে জয়নাল আবেদীন নামে একজন জামায়াত কর্মী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, জাতীয় পার্টি মানে জাতীয় বেঈমান। তার গত জীবনের আমলনামা ফ্যাসিজমের পক্ষে ভরা। তাছাড়া জামায়াতে এ ধরণের কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা জুড়ে জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
দিদারুলের নিজ এলাকা বাড়কুন্ডের স্থানীয় বাসিন্দারাও সমালোচনায় এগিয়ে আছেন। তারা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী কি দেউলিয়া হয়ে গেল? জাতীয় পার্টির নেতা দিদারুল আলমের ছেলে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি৷ সে নিজেও পুলিশের দালাল ছিল। কোন স্বার্থে এতো তাড়াতাড়ি কথা ভুলে গেল জামায়াত?
সীতাকুণ্ড উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, দিদারুল আলম ইসলামী চেতনার একজন মানুষ। আমরা যাচাই-বাছাই করে তাকে দলে ঠাঁই দিয়েছি।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার এড়াতেই তড়িঘড়ি করে জামায়াতে যোগ দিতে পারেন দিদারুল আলম৷