
যায়যায়কাল প্রতিবেদক: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ওপর জমা হওয়া আবেদনের ওপর শুনানিকালে ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি-কিল-ঘুষির ঘটনা ঘটেছে।
রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এই শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে বেলা ১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহর অভিযোগ, তিনিসহ তার দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলা চালিয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা ও তার সঙ্গে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীরা।
রুমিন ফারহানার দাবি, আতাউল্লাহ পরিচিত মুখ নন। তিনি এনসিপি থেকে এসেছেন, না জামায়াত থেকে এসেছেন, তা তিনি জানেন না। প্রথমে তাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। তারপর তো আর তার লোকজন তো বসে থাকবেন না। তার লোকজনও জবাব দিয়েছেন।
আতাউল্লাহর দেখানো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রুমিন ফারহানা স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। পেছন আতাউল্লাহ নিচে পড়ে আছেন। তাকে কয়েকজন লাথি-কিল-ঘুষি দিচ্ছেন।
আতাউল্লাহ বলেন, ‘শুনানিতে রুমিন ফারহানা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। কিন্তু যখন আমি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে যাই, তখন রুমিন ফারহানা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে স্টেজ দখলে নেন। পরে তার নেতা-কর্মীরা আমাকে ফুটবলের মতো লাথি দেওয়া শুরু করে। যেভাবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ক্যাম্পাসে পিষতো, সেভাবে সবার সামনে আমাকে নিচে ফেলে পিষছে। আমার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেছে। হাতে আঘাত করা হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন তখন কী করেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন তখন আর কাউকে কথা বলতে দেয়নি। বিএনপি ছাড়া শুনানিতে জামায়াতে ইসলামীকেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
এনসিপির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো, বিজয়নগরকে একত্র রাখা। রুমিন ফারহানা তিনটি ইউনিয়নকে বাগিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। যখন আমরা শুনানি করতে যাই, তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনের সামনে রুমিন ফারহানা ও তার গুন্ডাবাহিনীরা আমাদের ওপর হামলা করে। সবার সামনে আমাদের নিচে ফেলে যেভাবে পিষেছে, তাতে বোঝায়, এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনো হবে না।’
এনসিপির নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মুশকিলের বিষয় হচ্ছে তিনি (আতাউল্লাহ) পরিচিত মুখ নন। তিনি এনসিপি থেকে এসেছেন, না জামায়াত থেকে এসেছেন, আমি জানি না। তবে উনি (আতাউল্লাহ) প্রথম, সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। তারপর আমার লোকজন তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন মহিলা। এবং পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজনও জবাব দিয়েছে। এটা সিম্পল।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী (জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল) গুন্ডাপান্ডা নিয়ে ইসি ভবনে প্রবেশ করেছেন। তিনি (রুমিন ফারহানা) যখন একটা কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছেন, তখন তার গায়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য তিনি ১৫ বছর লড়াই করেছেন, তারা তাকে এখন ধাক্কা দেয়। ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই। সেটাই হয়েছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, খালেদা জিয়া সবসময় বলেছেন, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সীমানা একটি ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের স্বার্থে নির্ধারণ করেছে, যা তারা মানেন না। তাই তারা চান, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়া হোক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)-এর সঙ্গে যুক্ত করার খসড়া করেছে ইসি। এই ইউনিয়নগুলো হলো-বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর। এর পক্ষে রুমিন ফারহানা।
মারামারির বিষয়ে খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, ‘এখানে আসলে এনসিপির সাথে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এটা আসলে দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। এই লেভেলে এসে এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।…কমিশন শুনানি নিয়েছেন। কিছু হট্টগোল হয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ অনেক ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে, যেগুলো কোনো যৌক্তিক নয়। আমরা মনে করি, এই তিনটি ইউনিয়ন সদর বিজয়নগরের সাথেই থাকা উচিত।’
খালেদ হোসেন মাহবুব বলেন, বিজয়নগরের ১০টি ইউনিয়ন থেকে তিনটি ইউনিয়ন আশুগঞ্জ ও সরাইলের সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের খসড়া করা হয়েছে। কিন্তু বিজয়নগরের এই তিন এলাকার লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও আশুগঞ্জের সঙ্গে যেতে চাচ্ছে না। তারা এই তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সঙ্গে রাখার আবেদন জানিয়েছেন।