বুধবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরগঞ্জে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে ইট ভাটা নির্মাণ

নুরুল ইসলাম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশদহ গ্রামে কৃষি জমির উপর অবৈধভাবে এসআরবি নামে নতুন ইট ভাটা নির্মাণ করেছেন মো. শফিকুল আলম চুন্নু মাস্টার।

সম্প্রতি জনস্বার্থে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, রংপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড বরাবরে দায়ের হলেও টনক নড়েনি তার। বরং আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যাপক উৎসাহে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সচেতন মহল বলছেন, ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের জন্য দেশে একটি আইন আছে। কিন্তু আইন থাকলেও এ আইনের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সরকার ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এ আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনও সম্ভব হয়নি। আইনে যেসব ক্ষমতা দেয়া আছে সেসব ক্ষমতা প্রয়োগ না করার ফলে আইনের এ রকম বরখেলাপ চলছেই।

আইনে আছে জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স বা অনুমতি ছাড়া কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না (৪ ধারা)। কিন্তু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মো. শফিকুল আলম চুন্নু মাস্টারের ইট ভাটার অনুমোদন নেই।

আইনে আছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে, ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন না করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ আছে (৫ ধারা)। কিন্তু বাস্তবেতো আমার দেখি অধিকাংশ ইট ভাটার জন্যই কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়। এসব জায়গা থেকে মাটি তুলেই তৈরি হয় ইট। জলাশয় ভরাট করে তৈরি হয় ইট ভাটা।

এছাড়া ৫(৩) ধারায় ইটের প্রস্তুত প্রণালীও বর্ণনা করা হয়েছে। আইনে বলা আছে, ইটের কাঁচামাল হিসাবে মাটির ব্যবহার হ্রাস করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটায় কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ ফাঁপা ইট (Hollow Brick) প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু আইনের এ বিধান কে মেনে চলছে?

আইনানুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে ইটভাটায় চলাচলের জন্য কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারবেনা। কিন্তু ইট আনা নেয়ার জন্য সরকার ও স্থানীয় সরকারের নির্মিত এসব সড়ক বা পথ দিয়েই চলাচল করছে এসব ভারি যানবাহন। দেশের অনেক উপসড়ক ও রাস্তার বেহাল দশা হওয়ার অন্যতম কারণ এসব যানবাহন।

শুধু ইটই নয়, ইটের তৈরির কাচামালও আনা নেয়া করা হয় এসব সড়ক দিয়ে। সব কাজই হচ্ছে বিদ্যমান সড়ক ব্যহার করে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে আইনানুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যেক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি. কৃষি জমি ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এ বিধানের কি পুরোপুরি প্রয়োগ হচ্ছে? বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা কৃষি জমিতে দেখা যাবে গড়ে উঠেছে কোনো কোনো ইট ভাটা।

যদি কোনো আইন লঙ্ঘন করে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করেন তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

এছাড়া আইনে অননুমোদিত স্থানে ইট ভাটা স্থাপন করলে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ও দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াতে ইট ভাটার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এভাবে ইট ভাটা স্থাপনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনেক।

তাই দ্রুত এ ইট ভাটার নির্মান কাজ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ