সোমবার, ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

হেলিকপ্টার দেখে ‘হাত নেড়ে’ গ্রেপ্তার গোপালগঞ্জের প্রশান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে অফিস অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার প্রশান্ত মালাকার।

গত ১৯ জুলাই অফিস না থাকায় রাজধানীর ভাটারায় নিজের মেছেই ছিলেন তিনি। এ সময় ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার যেতে দেখে মেছের ছাদ থেকে হাত নেড়েছিলেন ২২ বছরের এই তরুণ। এর কিছুক্ষণ পরেই বাসার ছাদে এসে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায় বলে জানান প্রশান্তের বাবা সুশান্ত মালাকার।

কান্না জড়ানো কণ্ঠে সুশান্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্রামে বড় হয়েছে আমার ছেলে, জীবনে কোনোদিন হেলিকপ্টার দেখেনি। তাই হয়তো বাড়ির ছাদে উঠে হাত নেড়েছে। এই জন্য তারে ধরে নিয়ে যেতে হবে?’

প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাবা-মায়ের সাথে কথা হতো প্রশান্তের। কিছুদিন পর ফসল ওঠনোর সময় বাবাকে সাহায্য করতে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু এখন বিনা অপরাধে ছেলে জেল খাটছেন বলে অভিযোগ করেন গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার কৃষক সুশান্ত মালাকার।

তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষিকাজ করি। পরিবারের কেউ কোনোদিন কোট-কাচারিতে যাইনি। এই প্রথম আমার নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। কী করে তাকে মুক্ত করব, এত টাকা কোথায় পাব– কিছুই জানি না।’

জানা যায়, গত ২২ জুলাই বারিধারা উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরসহ বিস্ফোরক আইনের মামলায় পুলিশ প্রশান্তকে আদালতে হাজির করে। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।

৩০ জুলাই তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও প্রশান্তর জামিন নাকচ করেন আদালত।

এ বিষয়ে প্রশান্তের আইনজীবী রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমরা আদালতে আর্টিকেল ৩৬ এর কথা বলেছি, যেখানে প্রত্যকে নাগরিকের বাংলাদেশের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার রয়েছে। কিন্তু নিজের বাসার ছাদে হেলিকপ্টার দেখে হাত নাড়ার কারণে তাকে আটক করে তার সাংবাধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।’

প্রশান্তের বাবা সুশান্ত মালাকার বলেন, ‘দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে প্রশান্ত মেঝো। সহজ সরল ছেলে আমার, অনেক কষ্ট করে ইন্টার পাশ করিয়েছি। এ মাসেই ৬,০০০ টাকা বেতনে ঢাকায় একটা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়। ওকে পুলিশে ধরার একটু আগেও আমার সাথে কথা বলে জানিয়েছে বেতন পেলেই বাড়ি যাবে, জমিতেও আমার সাথে কিছুদিন কাজ করে আসবে।’

‘এর পরই আমার ফুট্টুসকে (প্রশান্ত) পুলিশে নিয়ে যায়,’ যোগ করেন সুশান্ত।

সুশান্ত মালাকার বলেন, ‘ছেলের চিন্তায় আজ ১০ দিন আমাদের ঘুম খাওয়া সব বন্ধ। ছেলের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, প্রতিদিন বলে আমার ছেলেরে মুক্ত করে নিয়ে আসো। টাকার অভাবে এতদিন আসতে পারিনি। নিজের জমিও নেই যে বেঁচে দেব। সুদের ওপর ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ঢাকা এসেছি। ঢাকায় কিছুই চিনি না, কোথায় যাব, কী করব? উকিল বললো জামিনের আবেদন করলেও জামিন দেয়নি আরও সময় লাগবে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ