
মো. ওসমান গণি (ইলি), কক্সবাজার: কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে অবশেষে পূর্ণাঙ্গ ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় ক্রয় কমিটি (সিসিজিপি)। একইসঙ্গে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্পও অনুমোদন পেয়েছে।
সোমবার অনুষ্ঠিত সিসিজিপির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ সোহেল বকস।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে খবর এসেছে যে, আজকের সিসিজিপির সভায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখনো অফিসিয়াল পত্র হাতে আসেনি, তবে আশা করছি আগামীকাল পেয়ে যাবো। অনুমোদন পাওয়া অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।”
অধ্যক্ষ আরও জানান, প্রকল্পের ব্যয় ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য তথ্য অফিসিয়াল কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর জানা যাবে। হাসপাতালটি হবে ১০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন। অনুমোদনের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান
২০০৮ সালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। ২০১৭ সালে কলেজটি নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হলেও এখনো পর্যন্ত কলেজটির নিজস্ব পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণ হয়নি। ফলে চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ১০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, আধুনিক কলেজের নাম থাকলেও দৈনন্দিন যাতায়াতে মাত্র দুটি বাসই ভরসা। এছাড়াও রয়েছে চরম শিক্ষক সংকট ও আবাসন সমস্যা। ১৪টি ব্যাচ এরই মধ্যে কলেজ থেকে পাশ করে গেলেও পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের অভাবে দুর্ভোগ ছিলো নিত্যসঙ্গী।
একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজের সঙ্গে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল থাকা বাধ্যতামূলক। যেখানে অন্তত ২০টি বিভাগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ এতদিন সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো।
বর্তমানে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। কিছু ওএসডি সহকারী অধ্যাপক কলেজে সংযুক্ত থাকলেও মূলত জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম।
অবকাঠামো সংকটও প্রকট
কলেজের ১০ তলার একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ছয় তলা পর্যন্ত। ছয়তলা বিশিষ্ট দুটি ছাত্রাবাসেরও নির্মাণ থেমে আছে তিন তলায়। ফলে আবাসন সংকটে শিক্ষার্থীদের গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে, যা শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ তাদের।
জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে আশার আলো
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “এই অঞ্চলে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং প্রতি বছর আগত লাখ লাখ পর্যটকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরেই অপ্রতুল। সেখানে নির্ধারিত ধারণক্ষমতার তুলনায় তিন-চারগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। ৫০০ শয্যার একটি আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ অঞ্চলের জন্য নিঃসন্দেহে একটি আশীর্বাদ।”
হাসপাতালটি চালু হলে এখানে থাকবে সিসিইউ, আইসিইউ ও কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট।
কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ রিপন চৌধুরী বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে। আজ যখন পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের অনুমোদনের খবর পেলাম, সত্যিই আনন্দিত। বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. সোহেল বকস অনেক পরিশ্রম করেছেন এই কাজটি বাস্তবায়নের জন্য।”
এখন সবকিছু ঠিকভাবে এগোলে বহুপ্রতীক্ষিত হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।