সোমবার, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

২৫ বছরেও অবৈধ দখল ছাড়েননি তাঁরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পরও দীর্ঘদিন দখল ধরে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত হাজী গোলাম নবী ওয়াক্‌ফ এস্টেটের সাবেক অভিভাবক মোতাওয়াল্লির সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে। এমনকি দখল ছাড়তে বলায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনেছেন এস্টেটের বর্তমান মোতাওয়াল্লি মোহাম্মদ আমির হামজা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজী গোলাম নবী নামে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি পশ্চিম মালিবাগে শূন্য দশমিক ২৪৯ শতাংশ জমির ওপর নিজের নামে একটি ওয়াক্‌ফ (ধর্মীয় কাজে চিরস্থায়ীভাবে নিজের মালিকানাধীন সম্পদ উৎসর্গ) এস্টেট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জীবিত থাকাকালে তিনি নিজেই এটি পরিচালনা করতেন। এই এস্টেটের আয় থেকে ১২ কাঠা জমির ওপর তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাড্ডা বরকতপুর জামে মসজিদ, বাড্ডা বরকতপুর মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং কবরস্থানে দান করতেন। পরে এস্টেটের মোতাওয়াল্লি হন মৃত মো. ইসমাইল। তিনি এলাকার ভাসমান ব্যবসায়ী ছিলেন।

ভালো সম্পর্কের সূত্রে তাঁকে নিজের জায়গায় ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছিলেন হাজী গোলাম নবী। তিন ছেলে নাবালক থাকায় একান্ত বিশ্বস্ত মো. ইসমাইলকে ওয়াক্‌ফ এস্টেটের অভিভাবক মোতাওয়াল্লি হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। গোলাম নবীর সন্তানদের বয়োজ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ১৮ বছর পূর্ণ হলে দলিলপত্র ও ওয়াক্‌ফ এস্টেটের অন্য সব হিসাবপত্র বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে- এই মর্মে ১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একটি ওয়াক্‌ফ লিল্লাহ দলিল সম্পাদন করা হয়। এর পরের বছরই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। হাজী গোলাম নবীর বড় ছেলে মোহাম্মদ আমির হামজার বয়স ১৮ বছর হওয়ার পর ওয়াক্‌ফ এস্টেটের সব কাগজপত্র, সম্পত্তির দলিল ও অন্যান্য হিসাবপত্র বুঝে নিতে চাইলে মো. ইসমাইল বিভিন্ন রকম টালবাহানা শুরু করেন এবং ভয়ভীতি দেখান।

বিষয়টি নিয়ে হাজী গোলাম নবীর স্ত্রী মোসা. হাফিজা খাতুন এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে যাওয়ার পরও মো. ইসমাইল ওয়াক্‌ফ এস্টেটের কোনো ধরনের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেননি। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ওয়াক্‌ফ প্রশাসক, অতিরিক্ত প্রশাসক, সহকারী প্রশাসক এবং পরিদর্শকের হস্তক্ষেপে হাজি গোলাম নবী ওয়াক্‌ফ এস্টেটের দলিল অনুযায়ী যাবতীয় হিসাবপত্র হাজী গোলাম নবীর বড় ছেলে আমির হামজাকে বুঝিয়ে দেন। একই সঙ্গে ওয়াক্‌ফ প্রশাসক মো. ইসমাইলকে মোতাওয়াল্লির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমির হামজাকে মোতাওয়াল্লি নিয়োগ দেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালে তাঁর ১৮ বছর হলেও এ জন্য তাঁকে দীর্ঘ ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়।

দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও তিনতলাবিশিষ্ট ওয়াক্‌ফ এস্টেট ভবনের দখল ছাড়ছেন না মো. ইসমাইলের তিন ছেলে ও তাঁর আত্মীয়স্বজন। ভবনের নিচতলার চারটি দোকান নামমাত্র ভাড়া দিয়ে বা কোনোটির ভাড়া না দিয়েই তাঁরা দখল করে আছেন। দোকানগুলোর মধ্যে ১ নম্বর দোকান মো. ইসমাইলের বড় ছেলে হাবীবুর রহমান মন্টুর দখলে, ২ নম্বর দোকান মেজো ছেলে আহসানুর রহমান পিন্টুর দখলে, ৩ নম্বর দোকান ছোট ছেলে বাদশাহ ফয়সালের দখলে এবং অপর একটি দোকান নিকটাত্মীয় মো. জাহাঙ্গীরের দখলে। দ্বিতীয় তলায় মো. ইসমাইল গ্রামীণ চেক নামে একটি কাপড়ের শোরুম দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরে সেটি আমির হামজার কাছে বিক্রি করে দেন। তৃতীয় তলায় ইসমাইলের আরেক নিকটাত্মীয় মো. শহীদুর রহমানের দখলে। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমির হামজা তাঁদের বারবার উকিল নোটিশ দেওয়ার পরও তাঁরা দোকানের দখল ছাড়েননি। এমনকি তাঁরা বকেয়া ভাড়াও দেননি, চুক্তির মেয়াদও বাড়াননি।

এস্টেটের বর্তমান মোতাওয়াল্লি আমির হামজা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে একাধিকবার মৌখিকভাবে বকেয়া ভাড়া প্রদানসহ নতুন করে চুক্তিনামা সই করতে বলি এবং একাধিকবার উকিল নোটিশ প্রদান করি। তাঁরা বকেয়া ভাড়া না দিলে এবং চুক্তির মেয়াদ না বাড়ালে আমি তাঁদের দোকান ছেড়ে দিতে বলি। এর পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হন।

বিভিন্ন সময় তাঁরা আমাকে সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেজো ছেলে আহসানুর রহমান পিন্টু তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। আমরা নিয়মিত ভাড়া দিই; কিন্তু আমাদের ভাড়া আদায়ের রসিদ দেওয়া হয়নি। প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কেন হুমকি দিতে যাব? আমির হামজা উল্টো আমাদের দোকানের কর্মচারীদের হুমকি দিচ্ছেন।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা অঞ্চল-১ এর ওয়াক্‌ফ পরিদর্শক মো. ইউছুব আলী বলেন, এ বিষয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার সবার বক্তব্য শুনে এবং যাবতীয় কাগজপত্র দেখে ওয়াক্‌ফ প্রশাসনে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *