এস আই খান:
নরসিংদীতে ইউপি সদস্যের যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ হিসেবে দুই মেয়েকে বাদ দিয়েই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া ওয়ারিশ পত্রে স্বাক্ষর দিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান। গত ২৩ নভেম্বর (শনিবার) সরকারি ছুটিরদিন অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে একটি ওয়ারিশ সার্টিফিকেট ইস্যূ করে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জারচর ইউপি চেয়ারম্যান মোসা. মাহফুজা আক্তার।
জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের অধীন বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা সবদর আলী ওরফে গেদু মিয়া ১৯৭৮ সালের ১ এপ্রিল মৃত্যূবরন করেন। বর্তমানে তার ওয়ারিশ হিসেবে ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে দাবীদার। ইতোমধ্যে তার মৃত্যূর ৪৫ বছর ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ বছরে সবদর আলীর সন্তান বা ওয়ারিশদের কোন ওয়ারিশ সনদের প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি তার দ্বিতীয় ছেলে ছিদ্দিক মিয়া পিতার ওয়ারিশ হিসেবে তাদের দুই বোনের নাম বাদ দিয়ে ৩ ভাই ও ৩ বোনের নাম উল্লেখ করে ওয়ারিশসনদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করে। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাসিদ মিয়া মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাতে সুপারিশ করে এবং তারই যোগসাজসে ইউপি চেয়ারম্যান মোসা. মাহফুজা আক্তার স্বাক্ষর করে সবদর আলীর ওয়ারিশ হিসেবে ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের নাম উল্লেখ পূর্বক ওয়ারিশসনদ ইস্যু করে। এর ফলে সবদর আলীর দুই মেয়েকে পৈত্রিক ওয়ারিশ থেকে করেছে বঞ্চিত। যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
আবার এই সনদ দেওয়া হয় গত ২৩ নভেম্বর। ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী সেদিন শনিবার সরকারি ছুটির দিন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) সরকারি ছুটির দিন থাকায় মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী আসেনি এবং কোন রকম সেদিন কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। ছুটির দিনে পরিষদের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান কিভাবে ওইদিন ওই ওয়ারিশ সনদ প্রদান করলেন সেটাই এখন স্থানীয়দের প্রশ্ন। কিছু কিছু স্থানীয়রা মনে করছেন ছুটির দিনে ইউপি চেয়ারম্যান লোকচক্ষুর আড়ালে বাড়িতে বসে অবৈধ এ কাজগুলো করে থাকেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আমেনা বেগম বলেন, আমরা ৫ বোন ও ৩ ভাই। কিন্তু আমার ভাইয়েরা আমার এবং আমার অপর এক বোনের নাম বাদ দিয়ে তাদের ৩ ভাই ও ৩ বোনের নামে মৃত পিতার সম্পত্তির দাবীদার হতে পরিষদ অফিস হতে ওয়ারিশ সনদ তোলে। আমি বলতে চাই তারা যেমন আমার মৃত পিতা সবদর সবাই যাকে গেদু মিয়া বলে ডাকতো তার সন্তান আমরা দুই বোনও তো একই পিতার সন্তান, তাহলে আমাদের দুজনের নাম কেন বাদ দেওয়া হলো। তারা মেম্বারকে টাকা দিয়ে আমাদের নাম বাদ দিয়ে এই ওয়ারিশ সার্টিফিকেট বের করেছে। যা অন্যায়। এই সার্টিফিকেট বাতিল না করা হলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
এ ব্যাপারে সবদর আলীর দ্বিতীয় ছেলে ছিদ্দিক মিয়ার সাথে যোগাোযগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
পরে ইউপি সদস্য বাসিদ মিয়ার সাথে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে গত দুইদিন ধরে বেশ কয়েক চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মির্জারচর ইউপি চেয়ারম্যান মোসা. মাহফুজা আক্তার’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? যা জিজ্ঞেস করার মেম্বারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। যাচাই বাচাই আমার কাজ নয়। এ কাজটা মেম্বারের। তাই এবিষয়ে যা জানতে চান সেটা তার কাছ থেকেই জেনে নিবে।
পরে এ বিয়য়ে তার কাছ থেকে বক্তব্য চাইলে তিনি রাস্তায় আছেন, ১০ মিনিট পরে তিনি ফোন করবেন বলে জানান। কিন্তু এরপর তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
নরসিংদীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মৌসুমী সরকার রাখী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।