রবিবার, ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

আশুগঞ্জে মৃত শিশুদের পরিবারের ভিন্ন-ভিন্ন বক্তব্য, ‘ফোনকল’ নিয়েও সন্দেহ!

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে জ্বরের ওষুধ খাওয়ার পর দুই শিশুর (সহোদর) মৃত্যু রহস্যের কুলকিনারা হয়নি গত ছয়দিনেও। ওষুধ প্রশাসন নাপায় কোন ক্ষতিকর পদার্থ ছিলনা বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তবে জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কেউ চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছে কিনা! সাংবাদিক ও চিকিৎসক মহলে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।

ভিসেরা ও যে ওষুধ খেয়ে শিশুদের মৃত্যু হয় সেগুলোর পরীক্ষার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে মৃত শিশুদের পরিবার সুজন-লিমা দম্পতির ভিন্ন-ভিন্ন বক্তব্য নিয়েও কথা উঠেছে। তারা একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। শিশুদের পরিবারের একজনের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড নিয়েও সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে। একটি ফোন নম্বর থেকে কার সঙ্গে কি কারণে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলা হতো সেটি জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সুজনের স্ত্রী-লিমা যে কুড়ার মিলে কাজ করে, ওই মিলের সরদারের কাছে তার ব্যক্তিগত একটি সিমকার্ড আছে বলে শিশুদের মামার সূত্রে জানা যায়। তবে পরিবারটি শোকাগ্রস্থ হওয়া এ বিষয়ে খুব একটা জোর দিয়ে এগুতে চাইছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব বিষয় নজরদারিতে আছে।

এদিকে এ ঘটনায় গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কি আছে, এখনও সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।

অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতে নাপা সিরাপ বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ক্যামিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি। সোমবার রাতে সমিতির এক প্যাডে সাধারন সম্পাদক আবু কাউসার পুনরায় নাপা বিক্রির অনুরোধ করেন। ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট দোকান থেকে সংগ্রহ করা নাপাতে কোনো ধরণের ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করায় ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়ায় বিক্রির অনুরোধের কথা উল্লেখ করা হয়।

সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠার পর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা কিংবা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অন্যকোন চক্রান্ত ছিল কিনা- সে বিষয়ে সদর হাসপাতালের তদন্ত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্টরা।

১০ মার্চ রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সুজন খানের ছেলে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়।

পরিবারের লোকজন জানান, জ্বরের জন্য আনা ওষুধ খাওয়ার পর বমি করে ওই দুই শিশু। প্রথমে আশুগঞ্জ ও পরে জেলা সদর হাসপাতালে তাদেরকে আনা হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে একজন পরে বাড়িতে আরেকজন মৃত্যু হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গঠনের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ইতোমধ্যে কমিটি হাসপাতালে এসে তদন্ত করে গেছে। সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের যে কমিটি গঠন করেছিল, সেটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

ওই দুই শিশুর মা লিমা বেগম শুরু থেকেই অভিযোগ করছিলেন, সিরাপ খাওয়ানোর পর অসুস্থ হয়ে যাওয়া দুই শিশুকে প্রথমে আশুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুদেরকে বাড়িতে নিয়ে বেশি করে তেতুলের পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। পরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে এক শিশু এবং বাড়িতে নেওয়ার পর আরেক শিশুর মৃত্যু হয়।

তবে ওইদিন রাতে ইমার্জেন্সিতে কর্মরত স্বপন মিয়া দাবি করে জানান, রাতে ইমার্জেন্সির ভেতর শিশুদের তেতুলের পানি খাওয়ানোর কথা শোনেনি। ইমার্জেন্সি কক্ষের বাহিরের কোন দালাল বা কোন দর্শনার্থী তেতুলের পানি খাওয়ানোর কথা বলতে পারে! বেশিভাগ সময় ইমার্জেন্সি বিভাগ দালাল ও দর্শনার্থীদের দখলে থাকে। তবে শিশুদের চাচা চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকে আবার বের হয়ে গেছে। তাদেরকে ভর্তি ও স্টমাক ওয়াশের কথা বলা হলেও কি কারনে তারা চিকিৎসা না নিয়ে চলে গেলো সে বিষয় কিছু জানি না।

এদিকে ঘটনার পর থেকে ‘মা ফার্মেসির’ মালিক মঈন উদ্দিন পরিবারসহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা কোথায় আছেন সে বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। তবে এখনও মঈন উদ্দিনকে আটক করতে পারেননি পুলিশ। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ওষুধের দোকানটি সিলগালা করা হয়েছে।

সোমবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদেরকে জানান, ‘মা ফার্মেসী সহ জব্দ (নাপা সিরাপের ব্যাচের) ওষুধের গুণগত মান ঠিক ছিলো। সবগুলো পরীক্ষার ফলাফলে পজেটিভ এসেছে। সারাদেশ থেকেও নাপা এনে পরীক্ষা করা হবে। এক্ষেত্রে ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে দুটি শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক। নাপা সিরাপের তদন্ত রিপোর্ট, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, কোন বিষক্রিয়া বা ডাক্তারের বিরুদ্ধে বড় কোন চক্রান্ত হচ্ছে কিনা! নাকি শিশুদের পরিবারের ভিন্ন-ভিন্ন বক্তব্যে ও ‘ফোনকল’ ইস্যুতে বের হয়ে আসবে মৃত্যুর সঠিক কারন!

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ