মঙ্গলবার, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চার ইসরায়েলিকে উদ্ধার করতে ২৭৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজার মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে অভিযান চালিয়ে চারজন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই অভিযানের আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিকল্পনা করেছে তারা। জিম্মিদের জীবিত উদ্ধারের এ ঘটনা ইসরায়েলিদের জন্য যেমন আনন্দ নিয়ে এসেছে, তেমনি ২৭৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

জিম্মিদের উদ্ধারের সময় ঘনবসতিপূর্ণ নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে দুই শতাধিক ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি সেনারা হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ। এই নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। এমনই এক শিশুর মা নোরা আবু খামিস। পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন নোরা।

নুসেইরাত শিবিরে আশ্রয় নেওয়া অসহায় এই ফিলিস্তিনি মা বলেন, ‘আমার শিশুসন্তানের শরীরের অংশগুলো এক জায়গায় জড়ো করছিলাম, আমার প্রাণের সন্তান। আরেক শিশুসন্তান জীবন ও মৃত্যুর মাঝামাঝি রয়েছে। এমনকি আমার স্বামী, শাশুড়ি—পুরো পরিবারই ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল জাতিগতভাবে আমাদের নির্মূল করতে চাইছে।’

চার জিম্মিকে উদ্ধারের বিষয়টি গতকাল শনিবার জানিয়েছে ইসরায়েল। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সিডস অব সামার’ বা ‘গ্রীষ্মের বীজ’। অভিযানটি দিনের বেলায় চালানো হয়েছিল। সচরাচর এমনটি করে না ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলছে, প্রতিপক্ষকে হতবাক করে দেওয়ার জন্যই দিনের আলোয় অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

দিনের বেলায় অভিযানের অর্থ ঘটনাস্থলের কাছে সড়কগুলোয় মানুষের উপস্থিতি ছিল। এমনকি কাছের একটি বাজারে কেনাকাটা করছিলেন স্থানীয় লোকজন। ইসরায়েলি সেনাদের জন্যও তা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। শরণার্থীশিবিরে প্রবেশের চেয়ে সেখান থেকে বের হওয়াটা ছিল তাঁদের জন্য বেশি বিপদের। দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানের সময় আহত এক সেনা মারা গেছেন।

১৯৭৬ সালে উগান্ডার এনটেব্বে শহরে অভিযান চালিয়ে ১০০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করেছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। সেই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে অভিযান ছিল এনটেব্বেতে চালানো ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের মতোই।

ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েল থেকে গাজায় প্রবেশ করেন দেশটির কমান্ডোরা। তারপর তাঁরা নুসেইরাত শিবিরের দুই আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালান। একটি অ্যাপার্টমেন্টে ছিলেন ২৬ বছর বয়সী নোয়া আরগামানি। অপরটিতে ছিলেন শলোমি জিভ (৪১), আন্দ্রেই কজলভ (২৭) ও আলমগ মেইর জান (২২)।

উদ্ধার হওয়া চার জিম্মি কোনো খাঁচার মধ্যে ছিলেন না। তাঁদের ঘরের মধ্যে তালা মেরে রাখা হয়েছিল। ঘরগুলো পাহারা দিচ্ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। আইডিএফের মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, জিম্মিদের উদ্ধারের পর তাঁদের চারপাশে ঢালের মতো ঘিরে রেখেছিলেন ইসরায়েলের সেনারা। এভাবে ভবন থেকে বেরিয়ে তাঁদের সাঁজোয়া যানে তোলা হয়।

ঘটনাস্থল ত্যাগের পর ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ড্যানিয়েল হ্যাগারি। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী খুবই বিশদ আকারে এই অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল। এমনকি নুসেইরাত শিবিরের ওই ভবনের আদলে মডেল বানিয়ে অভিযানের মহড়া চালিয়েছিলেন তারা।

এদিকে হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু ও গুলিবর্ষণের সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন ফিলিস্তিনিরা। রাস্তার ওপর অনেকে লুটিয়ে পড়ে আছেন। মধ্য গাজার দুটি হাসপাতালের চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, হামলার পর ৭০টির বেশি মরদেহ সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের গণসংযোগ অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের এই অভিযানে ২৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে হ্যাগারের মতে, এই সংখ্যাটা ১০০ জনের কম। প্রকৃতপক্ষে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সে সংখ্যা যাচাই করে দেখতে পারেনি বিবিসি।

নুসেইরাত শিবিরে ইসরায়েলের এই অভিযান নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা হয়েছে ১০ বছরের শিশু আরেজ আল জাহদনেহের। তার ভাষ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনী আকাশ থেকে হামলার পাশাপাশি ট্যাংক থেকে গোলা ছুড়েছে। এ ছাড়া সেনারা গুলিও চালিয়েছিলেন। শিশুটি বলে, ‘আমরা নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমার বোন রিমাজ মাথায় আঘাত পেয়েছে। পাঁচ বছরের আরেক বোনও আহত হয়েছে।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ