শনিবার, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

চা বাগানে কর্মবিরতি অব্যাহত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে চা শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘটের ১৩তম দিন মঙ্গলবারও মৌলভীবাজারের অধিকাংশ চা বাগানে কাজ হয়নি। চা শ্রমিকেরা তাদের চলমান কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। সিলেট ভ্যালির মালনীছড়া ও লাক্কুরতলা চা বাগানে কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিলেও অধিকাংশ চা শ্রমিক তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে। হবিগঞ্জ জেলার কোনো চা বাগানে মঙ্গলবারও কাজ হয়নি।

সংকট নিরসনে ঢাকায় সরকারি কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতাদের সভা আহ্বান করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার।

এদিকে সোমবার কর্মবিরতি চলাকালে শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট চা বাগানে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে চা শ্রমিক নেতা পরেশ কালিন্দীকে লাঞ্চিত করেছেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, গত দুই দিনে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কে বা কারা অনেক শ্রমিককে বিভ্রান্ত করছে। এ কারণে তারা কাজে যোগ দেয়নি।

বিজয় হাজরা জানান, শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বাগানে বাগানে গিয়ে চা শ্রমিকদের কাজে ফেরার জন্য মোটিভেটেড করছেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ও শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডিডি নাহিদ ইসলাম।

এদিকে চা শিল্পে চলমান সংকট নিরসনে এবার উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তর। ঢাকায় আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সরকারি কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতাদের সভা আহ্বান করা হয়েছে। বিকাল ৩টায় শ্রম ভবনের সভাকক্ষে এই সভা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এমপি।

গতকাল সোমবার (২২ আগস্ট) শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল কাদের এ সংক্রান্ত এক নোটিশ জারি করেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে সভায় উপস্থিত থাকতে নোটিশের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যত তহবিল ট্রাস্টি বোর্ডের উপপরিচালক ও নিয়ন্ত্রক মো. নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, বালিশিরা ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি বিজয় হাজরা, সিলেট ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রাজু গোয়ালা, মনুদলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ধনা বাউরী, লস্করপুর ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র গোঁড় ও লংলা ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি শহীদুল ইসলামকে সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে ৭৩টি ফাঁড়ি বাগানসহ দেশের ২৪০টি চা বাগানে চা শ্রমিকদের এই আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে চার দিন চা শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে। পরে মালিকপক্ষ ১২০ টাকা থেকে ১৪ টাকা বাড়িয়ে মাত্র ১৩৪ টাকা মজুরি দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আন্দোলন লাগাতার ধর্মঘটে রূপ নেয়। এই পরিস্থিতিতে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে ছুটে আসেন। কিন্তু দিনব্যাপী দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সুরহা করতে না পারায় সমঝোতা ভেস্তে যায়।

পরে ঢাকায় আবারও ত্রিপক্ষীয় সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হয়। সর্বশেষ গত শনিবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে এসে আবারও সভা করে ১৪৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়।এতে রাজি হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু বিভিন্ন ভ্যালির শ্রমিকেরা তা মেনে নেয়নি। ফলে মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবদানে তা প্রত্যাহার করে নেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

রবিবার হবিগঞ্জ ও সিলেটে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন জোরদার করে সাধারণ চা শ্রমিকেরা। ৩০০ টাকা মজুরী দে,নইলে বুকে গুলি দে এমন স্লোগান শুরু করলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়।

পরে সোমবার ২২ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরেন। আরেক অংশ এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *